সংসারে সতিনে সতিনে ঝগড়া লাগার ঘটনা দেখা গেলেও ব্যাতিক্রম ঘটনা ঘটেছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নে। ভোটযুদ্ধে এক সতিনকে জেতাতে মাঠে নেমেছেন ছোট দুই সতিন।

জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে হতে যাওয়া রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে (৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডে) প্রার্থী হয়েছেন শাহিনা বেগম। তিনি কলম প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাত-দিন স্বামীসহ তিন সতিন ছুটে বেড়াচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায়। 

জানা গেছে, আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের মেহেরপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও মৎস্যচাষি দেলওয়ার হোসেন ভালোবেসে পর্যায়ক্রমে শাহিনা, আকলিমা ও রত্নাকে বিয়ে করেছেন। তিন স্ত্রীর ঘরে এক মেয়ে ও তিন ছেলে সন্তান রয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, শাহিনাকে ভোটে জয়ী করতে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন আকলিমা ও রত্না। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার দিন থেকেই  প্রচারণায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারা। প্রতিদিন সকাল হলেই শাহিনার কলম প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণা, ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চাইতে স্বামী দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে বের হয় শাহিনাসহ তিন সতিন। কখনও মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দোয়া চান আবার কখনও কখনও বিভিন্ন হাট-বাজারে জনসংযোগ করে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের এমন ভালোবাসা এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। তাদের ভালোবাসা দেখে ভোটারদের মাঝেও দেখা গেছে বেশ আগ্রহ। 

কথা হয় মেজো সতিন আকলিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার স্বামী তিনটি বিয়ে করলেও আমরা তিন সতিন একসঙ্গে এক বাড়িতে বসবাস করছি। আমাদের আজ পর্যন্ত কোনো ঝগড়া বিবাদ হয়নি। এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমার বড় আপা শাহিনা (বড় সতিন) সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ভোট করছেন। তিনি কলম প্রতীক নিয়ে ভোট করছেন। তাই আমার আমাদের আপাকে জেতাতে মাঠে কাজ করছি। আমরা আশাবাদী আমাদের আপা বিপুল ভোটে জয়ী হবেন এবং আমাদের যেভাবে ভালোবাসা দিয়ে বুকে আগলে রেখেন তেমনি জনগণের সেবা করবেন। 

একই কথা বলেন শাহিনার ছোট সতিন রত্না বেগম। তিনি বলেন, আমরা তিনজন সতিন হলেও আমাদের সম্পর্ক আপন বোনের চেয়েও মধুর। কখনও মনে হয়নি আমরা সতিন। আমরা তিন সতিন মিলে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে একেক দিন একেক গ্রামে জনসংযোগ করছি। আমাদের প্রতীক কলম। মানুষ আমাদের সাড়া দিচ্ছে এবং সবাই আমাদের বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছে এবং সাপোর্ট দিচ্ছে। আমার বড় সতিনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা শতভাগ আশাবাদী আমাদের আপা জয়ী হবেন। 

সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী বলেন, আমরা তিন সতিন সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়াই। আমরা এক বাড়িতে বসবাস করি।  এবারের নির্বাচনে আমার স্বামী ও দুই সতিনের অনুপ্রেরণা ও পরামর্শে ভোটে দাঁড়িয়েছি। আমার মার্কা হলো কলম। আমিসহ আমার স্বামী ও দুই সতিন একসঙ্গে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে যাচ্ছি। আমার দুই সতিন আমার পাশে আছে এবং এলাকার মানুষের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।

স্বামী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি তিন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে এক বাড়িতে বসবাস করি। আমি তাদের নিয়ে অনেক শান্তিতে আছি। আমার প্রথম স্ত্রী শাহিনার প্রতি জনগণের অনেক সমর্থন রয়েছে।

মেহেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, দেলোয়ারের তিন স্ত্রী। তারা সবাই এক বাড়িতে বসবাস করছে কিন্তু কোনো দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ দেখিনি। বাড়ির কাজগুলো তারা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। বড় সতিনকে ভোটে জেতাতে ছোট দুইজন ভোট চাচ্ছে এটা খুবই ভালো দৃষ্টান্ত।

একই কথা বলেন ওই গ্রামের আরেক প্রতিবেশী রখিনা বেগম। তিনি বলেন, তাদের তিন সতিনের মধুর মিল দেখে আমরা প্রতিবেশীরা অবাক হই। তারা কখনও ঝগড়া বিবাদ করে না। সবাই মিলে-মিশে বসবাস করছে। তারা সতিনের জন্য ভোট চাচ্ছে।  সবাই তাদের এমন মিল দেখে ছুটে যাচ্ছে।

রনি মিয়াজী/এসপি