রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোশনের (রাসিক) কাউন্সিলররা। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বুধবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে রাসিক কাউন্সিলররা এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

রাসিক জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে কাউন্সিলররা বলেন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের বিরুদ্ধে কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

আব্বাস আলীর বক্তব্য অসাংবিধানিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চেতনা ও নীতিমালার পরিপন্থী। আমরা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ কাটাখালী পৌর মেয়র আব্বাস আলীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে কাউন্সিলররা আরও বলেন, রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার পিতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর বন্ধু ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম। মেয়র লিটনকে নিয়ে অকথ্য, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন আব্বাস আলী। এতে আমরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। অনতিবিলম্বে আব্বাস আলীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেফতারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে, বুধবার বিকেলে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে কাটাখালীর মেয়র আব্বাস আলীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। এর আগে রাজশাহী সাবেক ছাত্রলীগ ফোরামের আয়োজনে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে এবং শফিকুজ্জামান শফিকের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন- সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান বাবু, আবদুল মমিন, মীর তৌহিদুর রহমান টিটু প্রমুখ। সমাবেশ থেকে মেয়র আব্বাস আলীকে রাজশাহীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার দাবি জানান তারা।

সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতে মেয়র আব্বাস আলীর কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়। ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বানালে ‘পাপ হবে’ এমন কথা বলতে শোনা গেছে মেয়র আব্বাস আলীকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের শেষের দিকের আলোচনার কিছু অংশের রেকর্ড এটি। গত আগস্টের মাঝামাঝিতে নিজ দফতরে ব্যবসায়ীদের নিয়ে এই বৈঠক করেন মেয়র। এই ক্লিপটি নিয়ে রাজশাহীতে বইছে সমালোচনার ঝড়।

বুধবার দিনভর মেয়র আব্বাস আলীর শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। বিকেলে জরুরি বৈঠক করে দলীয় পদ থেকে মেয়র আব্বাসকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়। আগামী তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে আব্বাস আলীর নামে নগরীর বোয়ালিয়া, চন্দ্রিমা ও রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি অভিযোগ দাখিল করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তিন কাউন্সিলর।

মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস।

 ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরআই/জেএস