যশোরের বাঘারপাড়া জামদিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সমাবেশে সশস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা আসলাম হোসেনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। হামলায় আওয়ামী লীগের অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে জামদিয়া ইউনিয়নের ভাগুড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

হামলায় আহতদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জামদিয়া ইউনিয়নের ভাগুড়া গ্রামের তবিবর রহমানের ছেলে শাহীন রেজা (৩৫), জসিম উদ্দিন দুলু (২৮), আমিন মোল্লার ছেলে তরিকুল মোল্লা (৩০), ইসমাইল বিশ্বাসের ছেলে দেলোয়ার বিশ্বাস (৩৫), ইদ্রিস বিশ্বাস (৫০), হবিবর রহমানের ছেলে লিকু (২৮), মিজানুর রহমানের ছেলে রনি (২২), ফসিয়ার বিশ্বাসের ছেলে মিলন বিশ্বাস (৪৫), সিরাজ মন্ডলের ছেলে মুরাদ মন্ডল (৪৫) ও তার ভাই তৌসিফ মন্ডল (৩৫)। এর মধ্যে লিকুর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। আহত অন্যরা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নৌকা প্রতীকের সমর্থক আহত ইদ্রিস বিশ্বাস জানান, শুক্রবার রাতে ভাগুড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরিফুল ইসলাম তিব্বতকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে প্রচারণায় আসেন বাঘারপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী। সভায় প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেওয়ার সময় ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আনারস প্রতীকের প্রার্থী আসলাম হোসেন ও মোরগ প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী বিএনপির সোলায়মানের সমর্থকরা হামলা চালায়। হামলায় নেতৃত্ব দেন মোরগ প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী সোলায়মান।

এ সময় স্বতন্ত্র ও মেম্বার প্রার্থীর ২০ সমর্থক চাপাতি, রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। পরে স্থানীয় লোকজন ও নেতাকর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা ও গুরুতরদের যশোর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ ঘটনার পর এলাকায় আতংক সৃষ্টি হয়েছে। বিশৃঙ্খলা দমনে ও এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, আহতদের কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এর মধ্যে লিপুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

হাসপাতালে উপজেলা চেয়ারম্যান ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের দিক-নির্দেশনায় কর্মী সমাবেশে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছিলাম। দলীয় কার্যালয়ের ভেতরেই বিএনপির সন্ত্রাসীরা হঠাৎ তাণ্ডব চালায়। মূলত আমাকে হত্যা ও ভোটের আগে জনমনে আতংক সৃষ্টি করতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ২০ থেকে ২৫ জন। এর মধ্যে ১০ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরিফুল ইসলাম তিব্বত জানান, অন্যস্থানে কর্মী সমাবেশ থাকায় দ্রুত ভাগুড়া ওয়ার্ডে কর্মী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার পর আমি চলে যাই। এরপর সভায় উপস্থিত হন উপজেলা চেয়ারম্যান ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় বিএনপি নেতা আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা অতর্কিত হামলা চালায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর হার নিশ্চিত জেনেই নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করতে এ হামলা চালিয়েছে। এ বিষয়ে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দিন বলেন, ঘটনা জানার পর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকাটি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাহিদ হাসান/এসএসএইচ