পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। তার বাসায় অস্ত্র ও মাদক রেখে মা এবং স্ত্রীকে ফাঁসানোর শঙ্কা জানিয়েছেন তিনি। 

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে এই শঙ্কার কথা জানান আব্বাস আলী। তবে কোথা থেকে তিনি এই লাইভে অংশ নিয়েছে তা জানা যায়নি।

ওই লাইভে কাউন্সিলরদের জোর করে অনাস্থা আনতে বাধ্য করার অভিযোগ আনেন আব্বাস। একই সঙ্গে তার কাছের মানুষদের হুমকি এমনকি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনেন।

কান্নাজতিত কণ্ঠে আব্বাস বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কী কারণে, কেনো এই ষড়যন্ত্র এবং কারা এর পেছনে সেটিও জানাতে চান। আর এ জন্য সবাইকে নিজের পাশে চান, সবার সহায়তাও চান এই পৌর মেয়র।

২২ নভেম্বর রাতে মেয়র আব্বাস আলীর কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের ওই অডিওটিতে কাটাখালীতে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের গেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বসালে ‘পাপ হবে’ এমন মন্তব্য করতে শোনা গেছে।

এই অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই উত্তাল রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গন। ওই অডিও কথোপকথন নিজের বলে স্বীকার করেছেন মেয়র আব্বাস আলী। ৩/৪ মাস আগে নিছক আড্ডা কিংবা গল্পের ছলে নিজেদের মধ্যে এই কথোপকথন হয়েছিল বলে দাবি করেন।

তিনি দাবি করেন, তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো কটুক্তি করেননি। কথা প্রসঙ্গে বলেছেন-ম্যুরালটা করলে ইসলামে ঠিক হবে না, পাপ হবে, তিনি সেই ম্যুরালটা করবো না। কিন্তু ম্যুরাল যে আর হবে না এমন কথা বলেননি। এতে নিজের ভুল স্বীকার করে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মেয়র আব্বাস।

আব্বাস যোগ করেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অহংকার। তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এটা শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দেশের সকল মানুষ বিশ্বাস করেন। আমিও এটা বিশ্বাস করি। তাকে নিয়ে সমালোচনার কোনো সুযোগ নেই।

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে ভাইরাল হওয়া সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা নিয়ে মেয়র আব্বাস বলেন, কাটাখালিতে পৌরসভায় দুটি গেট নির্মাণের ব্যাপারে দুটি ভিডিও আপলোড দিয়েছিলাম। জাতির পিতার ম্যুরালসহ গেট করতে জনগণের মতামত চেয়েছিলাম। এতে অনেকেই তাদের মতামত দিয়েছিলেন।

আব্বাস বলেন, ওই ভিডিও দুটি কাটাখালির জামিয়া উসমানীয়া মাদ্রাসার বড় হুজুর জামাল উদ্দিন মাহমুদ সন্দ্বীপির দৃষ্টিগোচর হয়। মাঝে মধ্যেই তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে মাদরাসার হুজুরদের সঙ্গে আলাপ করেন।

মাদরাসা সংলগ্ন ঈদগাহে একটি জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে বড় হুজুরের সঙ্গে তার আলাপ হয়। ওই দিন কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়ে বড় হুজুর সড়কের ম্যুরালে পরিবর্তন আনা যায় কিনা সেই অনুরোধ জানান। মুসলমান হিসেবে তিনি আল্লাহ ও কোরআনের প্রসঙ্গে দুর্বল হয়েছেন।

তিনি দলে অনুপ্রবেশকারী নন জানিয়ে মেয়র আব্বাস বলেন, ২০০২ সালে মহানগর যুবলীগ দিয়ে তার রাজনীতি শুরু। তার আগে কোনো দিন কোনো দল করেননি তিনি। কেউ অন্য কোনো দল করার প্রমাণ করতে পারলে আত্মহত্যার ঘোষণাও দেন।

আব্বাস আলী টানা দুই মেয়াদে কাটাখালী পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র। দুই মেয়াদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তিনি। ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য পদে।

অডিও ভাইরাল হবার পর তাকে দলীয় দুটি পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মেয়র পদ থেকে সরাতে আনা হয়েছে অনাস্থা প্রস্তাব। আইনি ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী নগরীর তিন থাকায় এরই মধ্যে দায়ের হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি অভিযোগ। এর মধ্যে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। 

জানতে চাইলে নগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, মেয়র আব্বাসের পরিবার বা আত্মীয়-স্বজন কেউ হয়রানির শিকার না হন সেই দিকে নজর রাখছে পুলিশ। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেই বিষয়ে আইনত ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।   

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরআই