গ্রেফতার বাবু ও জাহিদুল

গাজীপুরে সহকর্মীর বিবাহ বিচ্ছেদের পেছেনে জড়িত থাকার অভিযোগে ইনস্যুরেন্স কর্মী ফেরদৌসী বেগম (৩০) ও  তার পাঁচ বছরের মেয়ে তাসমিয়াকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত বুধবার (২৪ নভেম্বর) রাতের জোড়া খুনের ঘটনায় শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) রাতে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে কালীগঞ্জের একটি পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। 

গ্রেফতাররা হলেন- ফেরদৌসী বেগমের সহকর্মী লিমা আক্তারের স্বামী ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সালদিয়া এলাকার মনির হোসেনের ছেলে মো. মহিউদ্দিন ওরফে বাবু (৩৫) এবং একই এলাকার সাত্তার খানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম খান। 

নিহত ফেরদৌসী বেগম গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নরুনের বরাইয়া এলাকার বাছির উদ্দিন ব্যাপারীর মেয়ে ও গাড়িচালক রবিউল ইসলামের স্ত্রী। তাসমিয়া ফেরদৌসীর সাবেক স্বামীর ঘরে জন্ম নেওয়া একমাত্র মেয়ে।

শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর দফতরের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মো. জাকির হাসান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) রেজোয়ান আহম্মেদ,সহকারী কমিশনার ( সদর সার্কেল) রিপন চন্দ্র সরকার, সদর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মো. জাকির হাসান জানান, গাজীপুর মহানগরের হাড়িনাল এলাকায় সপরিবারে বসবাস করতেন ফেরদৗসী বেগম। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নরুন বাজার এলাকায়। ফেরদৌসী হাড়িনাল থেকে গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় গার্ডিয়ান ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। 

এদিকে সংসারের অভাব ঘুচাতে বাবুর স্ত্রী লিমাকে ওই ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন ফেরদৌসী। এতে লিমার স্বামীর মত ছিল না। এ নিয়ে লিমা-বাবু দম্পতির মধ্যে কলহ শুরু হয়। লিমাকে চাকরি থেকে বাদ করে দিতে ফেরদৌসীর কাছে বিভিন্ন সময় অনুরোধ করেন বাবু।

কিন্তু লিমা চাকরি ছাড়তে রাজি হননি। তিন মাস আগে তিনি তার স্বামী বাবুকে তালাক দেন। তাদের ছাড়াছাড়ির পেছনে ফেরদৌসীর হাত রয়েছে বলে বাবুর সন্দেহ হয়। এরপর থেকে প্রতিশোধ নিতে বাবু তার স্ত্রীর সহকর্মী ফেরদৌসীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর বিকেলে জাহিদুল ইসলাম খান ইনস্যুরেন্সের বিষয়ে কথা আছে বলে ফেরদৌসীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। জাহিদুলের ডাকে সাড়া দিয়ে ফেরদৌসী তার মেয়ে তাসমিয়াকে নিয়ে বাসা থেকে বের হন। পরে ফেরদৌসী ও তার মেয়েকে নিয়ে রিকশাযোগে হাড়িনালের বাসা থেকে গাজীপুর মহানগরের দেশিপাড়ার বিমানবাহিনীর টেক এলাকায় নিয়ে যায় জাহিদুল। রিকশা থেকে নেমে কিছু দূর হেঁটে যাওয়ার সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেখানে পূর্ব থেকেই অবস্থান নেয়া বাবু এবং সঙ্গে থাকা জাহিদুল ফেরদৌসীর গলায় ছুরিকাঘাত করেন। বিষয়টি দেখে ফেলায় মেয়ে তাসমিয়া চিৎকার করলে জাহিদুল তাকেও গলা কেটে হত্যা করেন এবং মরদেহ ফেলে রেখে ঘাতকরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

২৫ নভেম্বর এ ব্যাপারে নিহত ফেরদৌসীর ভাই হযরত আলী বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগরের সদর থানায় মামলা করেন। পুলিশ হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে শুক্রবার রাতে ওই দুইজনকে কালীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। 

জাকির হাসান বলেন, গ্রেফতাররা প্রাথমিকভাবে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। শনিবার তাদের দেওয়া তথ্য মতে গ্রামের বাড়ি সালদিয়া এলাকার একটি পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি সুইচ গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। বিকেলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে তাদের মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

শিহাব খান/আরএআর