বৃষ্টি সরকার

বৃষ্টি সরকার। বাবা বিশ্বজিৎ সরকার ফরিদপুর শহরে এক চালের দোকানের সাধারণ কর্মচারী। এখান থেকে যে সামান্য বেতন পান তা দিয়েই চলে চার সদস্যের পরিবার। সংসারে টানাটানি থাকায় বৃষ্টির মা দর্জির কাজ করেন। সেই টাকা বৃষ্টির পড়ালেখার পেছনে খরচ করেন।

জানা গেছে, টানাটানির সংসারে বৃষ্টির শৈশব-কৈশোর কেটেছে অভাব-অনটনে। পড়ালখার জন্য ছিল না কোনো টেবিল। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। কঠোর পরিশ্রম করেছেন, করেছেন সংগ্রাম। শেষমেষ ফলাফলও পেয়েছেন। বৃষ্টি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে বৃষ্টির ইচ্ছা প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ ইউনিটে ভর্তি হওয়ার। 

বৃষ্টির বাবা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, আমি ফরিদপুর শহরে এক চালের দোকানের সাধারণ কর্মচারী। মালিকের কাছ থেকে যে টাকা পাই তাই দিয়ে চলে আমার চার সদস্যের টানাটানির সংসার। বৃষ্টির মা গীতা রানী দর্জির কাজ করে কিছু টাকা আয় করেন এবং এ দিয়েই বৃষ্টির পড়ার খরচের যোগান দেয়।  

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করার পর সেখানকার স্থানীয় একটি কোচিংয়ে ভর্তি হয়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ায় মায়ের অনুপ্রেরণা, শিক্ষকদের উৎসাহ ও বান্ধবীদের সহযোগিতাকে সাফল্যের সিঁড়ি হিসেবে দেখছেন বৃষ্টি।

বৃষ্টি সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ এবং পরবর্তীতে সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসিতেও অটোপাসে জিপিএ-৫ অর্জন করেন।

নিজের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে বৃষ্টি বলেন, পড়ার ইচ্ছা থাকলে অভাব কোনো বাধা নয়। আমি আমার কলেজ শিক্ষকদের কাছ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখেছি। আমার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও প্রণাম জানাই। পাশাপাশি দেশবাসীর কাছে আশীর্বাদ চাই।

তিনি আরও বলেন, আমি ভবিষ্যতে আমার স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে চাই। আমার স্বপ্ন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ার।

বৃষ্টির মা গীতা রানী বলেন, অভাবে আমার বৃষ্টি পড়াশোনা করেছে। আমার মনে হচ্ছে ওর সাফল্যের শুরুটা মাত্র শুরু হলো। ও অনেক বড় হয়ে আমাদের সব দুঃখ-দুর্দশা দূর করবে। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।

জহির হোসেন/এসপি