বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর কথা বলি। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাসহ সরকার রসিকতা করছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপির মরা গাঙে নাকি জোয়ার আসবে না। দেখে যান ময়মনসিংহে। রাস্তায় রাস্তায় মানুষের স্রোত চলছে, জোয়ার চলছে। বাংলাদেশের নয়টি বিভাগীয় সদরে এমন বড় বড় সভা হচ্ছে। আগামী দিনে প্রত্যেক জেলায় জেলায় এ রকম সভা হবে। দরকার হলে প্রত্যেক উপজেলায় হবে, প্রতি হাটে-বাজারে হবে। আর সেই জোয়ারে ভেসে যাবেন আপনারা।

মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজারস্থ দলটির কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, কারও যদি সুচিকিৎসার প্রয়োজন হয় আর যদি তাতে বাধা দেওয়া হয় তাহলে কি তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয় না? সমস্ত ডাক্তাররা বলছে খালেদা জিয়ার যে বয়স আর যে সব রোগ, সব মিলিয়ে তার যে অবস্থা সে অবস্থা থেকে তাকে সুস্থ করতে হলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার। যেটা বাংলাদেশে সম্ভব না।

সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে দলটির কেন্দ্রীয় এ নেতা বলেন, কয়েকদিন পরপর রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী বিদেশ চলে যান চিকিৎসার জন্য। যে সেতুমন্ত্রী এত বক্তৃতা করেন উনাকেও দেখলাম কয়েকদিন আগে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে গিয়ে চিকিৎসা করে আসলেন। অনেক নেতারা যাচ্ছেন। তারা যেতে পারবে। তাদের কোনো দোষ নাই। বেগম খালেদা জিয়ার মতো এত অসুস্থ একটা রোগী যেতে পারেন না। তার বেলায় প্রশ্ন আসবে কেনো। তার কি অবদান বাংলাদেশের জন্য কম?

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবেন না। আইন বলে কেউ দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তাকে জেলে গিয়ে আবেদন করতে হয়। দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের বিদেশে থাকা লোককে মাফ করে দিয়েছেন। আপনাদের দলের ও সরকারের অনেক ব্যক্তির সন্তানদের জেলে যেতে হয়নি। তাদের দণ্ড মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। 

নেতাকর্মীদের কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের নেত্রী না শুধু, তিনি আমাদের মা। আমাদের সেই মায়ের মুক্তি কি আমরা চাই? উন্নত চিকিৎসা চাই? আমরা কি এদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই? সে জন্য কি যে কোনো আন্দোলনে রাজি আছি? যখন যে সিদ্ধান্ত আসে সেই সিদ্ধান্ত পালন করবেন?

এসব প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত সকল নেতাকর্মীই হাত উচিয়ে দলের সকল সিদ্ধান্ত পালনের প্রতিজ্ঞা করেন। পরে তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি আপনারা কথা রাখবেন। আমার বয়স ৭৫ বছর। আমি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছি। তারপরও আপনাদের কথা দিচ্ছি আপনাদের সেই আন্দোলনে সেই ময়দানে আপনাদের সামনেই থাকব। বিজয় আমাদের হয়েছে অতীতে। আবারও আগামীতে বিজয় আমাদেরই হবে। 

সমাবেশে ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী সদস্য ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন, আব্দুল বারী ড্যানী, সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার, জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ডা. রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শামীম তালুকদার, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. আনোয়ারুল হক প্রমুখ।

নেতারা বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফরমায়েশি রায়ে পঁচিশ মাস কারাগারে বন্দি রেখে স্লো পয়জনিং করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখন তাকে বিদেশ যেতে দেওয়া হচ্ছে না। মেডিকেল বোর্ড নেত্রীকে বিদেশ নিতে বলছে। কিন্তু সরকার উপহাস করছে। এতে সুচিকিৎসার অভাবে খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারের রেহাই নেই। টেনেহিঁচড়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু ও উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।

উবায়দুল হক/আরআই