ফরিদপুরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিশৃঙ্খলার কারণে পণ্ড হয়ে গেছে বিভাগীয় সমাবেশ। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে তাঁর সুচিকিৎসার দাবিতে মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তন চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

বেলা ২টার দিকে শুরু হওয়ার কথা ছিল অনুষ্ঠানটি। তবে অনুষ্ঠানের আগে হাজারো জনতার উপস্থিতিতে প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এর ফলে সামনের মুজিব সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিশেষ অতিথি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক ও জহুরুল হক, প্রধান বক্তা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নায়েবা ইউসুফ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান ও সেলিমুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা সোয়া দু'টার পর একে একে শামা ওবায়েদ, নায়াবা ইউসুফ, জয়নুল আবদিন ফারুক এবং প্রধান অতিথি মির্জা আব্বাস ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান। দোয়া কামনার মধ্য দিয়ে বেলা সোয়া তিনটার দিকে শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্রথমে বক্তব্য দেন ফরিদপুর মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহরিয়ার হোসেন। এরপর বক্তব্য দেন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন। এ সময় হলরুমের ভেতরে ও বাইরে কর্মীরা স্লোগান ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকেন। কেন্দ্রীয় ও জেলা বিএনপির একাধিক নেতা বারবার চেষ্টা করেও কর্মীদের হট্টগোল ও স্লোগান থামাতে পারেননি।

এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রেস ক্লাবের হলে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যান।

ওই সময় র্মিজা আব্বাস বলতে থাকেন, আমাদের মা (খালেদা জিয়া) জেলে আর আপনারা এসব কি করছেন? এ বিশৃঙ্খলা করছেন কেন? আপনারা থামলে আমরা বক্তব্য দিতে পারব। ওই সময় মঞ্চে দাঁড়িয়ে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, আপনারা ফরিদপুরে আজ যা দেখাইলেন তা আমরা কেন্দ্রে জানাব।

হট্টোগোলের মধ্যেই প্রায় ৪ মিনিট বক্তব্য দেন মির্জা আব্বাস। অশান্ত পরিবেশের কারণে তার কথা ভালো ভাবে শোনা যায়নি। এ সময় জয়নুল আবেদিন ফারুক দেড় মিনিটের বক্তব্য দিলে তাও শোনা যায়নি। অশান্ত পরিবেশের কারণে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম বার বার কর্মীদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানালেও তারা তা শোনেনি। পরে আর বক্তব্য দেননি বিএনপির এই নেত্রী।

এর ভেতরেই এক পর্যায়ে সমাবেশস্থলে সমাবেশ করার অনুপযোগী হয়ে পড়লে একে একে হট্টোগোলের মধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হলরুম থেকে বের হয়ে আসেন। বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গাড়িতে উঠে সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জুলফিকার হোসেন বলেন, বিভাগীয় সমাবেশে এ ধরণের ঘটনা দুঃখজনক। জেলার কতিপয় নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে গিয়ে এ বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে।

জহির হোসেন/আরআই