‘একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে থাকা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করে আন্দোলন লজ্জার ও দুঃখের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ক্ষমতায় থাকতে এমন ষড়যন্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের কলিজায় আঘাত হেনেছে। সরকারি চাকরিতে অবিলম্বে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করতে হবে। একই সঙ্গে বীর সন্তানদের সম্মানে ১ ডিসেম্বরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণা করতে হবে। নইলে দাবি আদায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরাও রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।’

বুধবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর টাউন হল মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সোলায়মান মিয়া এসব কথা বলেন। মুজিব শতবর্ষ ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ রংপুর জেলা ও মহানগর কমান্ড কাউন্সিল।

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা সোলায়মান মিয়া বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছের। আমরা পরাধীনতার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে এ দেশ স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির-বিএনপির ষড়যন্ত্রে ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের আন্দোলন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। এ সময় সারাদেশে চিহ্নিত সকল মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতার আনার দাবি জানান।
 
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ রংপুর মহানগর কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর দফতরর ও প্রশাসন) মহিদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের যুগ্ম মহাসচিব সুশান্ত ভৌমিক।

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিদুল ইসলাম বলেন, যাদের হাত ধরে আমরা স্বাধীন হয়েছি। তাদের ঋণ কোনোভাবেই শোধ করার মতো না। ভাতা দিয়ে, বাড়িঘর করে দিয়ে, চাকরি দিয়ে ও কোটা দিয়ে এই ঋণ শোধ হবে না। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে দেশ উপহার দিয়েছে। আজ আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য বিশ্ব দরবারে গর্বিত জাতি। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আমাদের আজীবন কৃতজ্ঞ থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব শফিকুল ইসলাম বাবু, যুগ্ম মহাসচিব আসাদুজ্জামান আসাদ, রেলওয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সিনিয়র সহসভাপতি শাহিনুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ মঞ্জু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত হোসেন হিমেল।

আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ডের যুগ্ম মহাসচিব আলমগীর কবির সোহাগ, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, রংপুর মহানগর কমান্ড কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রমুখ। 

আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা স্মারক প্রদানের পাশাপাশি উন্নতমানের কম্বল প্রদান করা হয়।

এর আগে সকালে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ রংপুর জেলা ও মহানগর কমান্ড কাউন্সিলর নগরীতে একটি শোভাযাত্রা বের করে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শোভাযাত্রাটি বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে কমান্ড নেতৃবৃন্দ।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর