মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুর এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ঘরের মধ্যে বিস্ফোরণে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) ভোররাতে সদর উপজেলার পশ্চিম মুক্তারপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- মো. কাউসার খান (৪২), কাউসারের স্ত্রী শান্তা বেগম (৩৮), ছেলে ইয়াসিন খান (৫) ও মেয়ে নহর খান (৩)। কাউসার আবুল খায়ের কোম্পানি লিমিটেডে রিভার ট্রান্সপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। তিনি চাকরির সুবাদে সদর উপজেলার পশ্চিম মুক্তারপুর এলাকার একটি তিন তলা বাড়ির দুই তলায় স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। 

স্থানীয়রা বলেন, বুধবার রাতে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোররাত ৪টা থেকে সোয়া ৪টার দিকে কাউসার খানদের বাড়িতে বিকট শব্দ শুনতে পাই। তাদের ঘরের সবাই চিৎকার করছিলেন। ‌ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের কক্ষ থেকে আগুন দেখি। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দেই। আশপাশের সবাই তাদের দুই তালার কক্ষে যাই। সেখানে পানি দিয়ে আগুন নেভাই। 

স্থানীয় তরুণ আফ্রিদি বলেন, বিকট শব্দে ঘর থেকে বেড় হই। গ্যাসের কারণেই এমন বিস্ফোরণ  হয়েছে। 

শাহ সিমেন্টের মেশিন অপারেটর আব্দুস সামাদ বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ শুনে কাউসার খানের বাসায় গিয়ে দেখি তাদের ঘরের ভেতর আগুন জ্বলছে। আমরা দরজা ধাক্কা দেই। কাউসার খান নিজেই দরজা খোলেন। পরবর্তীতে আমরা চারজনকেই অগ্নিদগ্ধ দেখতে পাই। তাদের হাত, মুখ, পা পোড়া ছিল। তার ছেলের শরীরের বেশিরভাগ অংশই পোড়া ছিল। দ্রুত সিমেন্ট কোম্পানির গাড়ি দিয়ে তাদেরকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেই।

মুন্সিগঞ্জ তিতাস গ্যাসের সহকারী কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যতটুকু দেখেছি গ্যাসের লিকেজ থেকে এ ঘটনা ঘটেনি। তবে এমন হতে পারে অসাবধানতাবশত পরিবারটি গ্যাসের চুলা ছেড়ে রেখেই ঘুমিয়ে ছিল। রাতের বেলায় যখন তারা শৌচাগার অথবা অন্য কোনো কারণে বৈদ্যুতিক সুইচ অন করে, সেখান থেকেই আগুন লাগার সূত্রপাত হতে পারে । 

মুন্সিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়ির স্টেশন কর্মকর্তা মো. আবু ইউসুফ জানান, ভোর পৌনে ৫টার দিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। চার তলা ভবনের দুই তলা ভবনের একটি বাসায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সেখানে মশারি, বিছানার, চাদর আগুনে পুড়ে গেছে। এছাড়া বাসার দরজা, জানালা আগুনে পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলেছে। অগ্নিদগ্ধ সবাইকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে যে কোনোভাবে বাসার কক্ষে গ্যাস জমা হয়। পরে গ্লোব অথবা বিদ্যুতের সুইচ থেকে আগুন লাগতে পারে। 

মুন্সিগঞ্জ সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাজিব খান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার অনেক আগেই এই পরিবারটিকে দগ্ধ অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মনে হচ্ছে, ঘরের কক্ষে গ্যাস জমা হয়েছিল। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ব.ম শামীম/আরএআর