চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাড়াই করার জন্য জমিতে রাখা ধানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত তিনদিনে প্রায় ৩ বিঘার অধিক ফসলি জমির ধান আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে তারা।

কৃষক, শ্রমিক, প্রতক্ষ্যদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার পলসা আলিম মাদরাসার পেছনে ও এসএম ভাটার পাশে রাতে কে বা কারা ধানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া গত রোববার রাতে দুই কৃষকের ১৪ কাঠা জমির ধান পুড়ে গেছে। এর দুদিন পর মঙ্গলবার দিবাগত রাতেও একইভাবে এক কৃষকের ৩০ কাঠা জমির ধান আগুনে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা হলেন- সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পলশা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত কালামের ছেলে আব্দুর রহিম, একই গ্রামের বিলাতের ছেলে মান্নান ও মো. রফিক। তাদের মধ্যে আব্দুর রহিমের ৮ কাঠা, মান্নানের ৬ কাঠা ও রফিকের ৩০ কাঠা জমির ধান আগুনে পুড়ে গেছে। সবগুলো ধানই জমিতে কেটে-বেঁধে রাখার পর স্তুপ করা ছিল। 

ধানকাটা শ্রমিক আমিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০-১২ দিন আমিসহ ৪ জন শ্রমিক ধানগুলো কেটেছিলাম। কাটার পর শুকিয়ে ৪-৫ দিন আগে বেঁধে এক জায়গায় জমা (স্তুপ) করে রেখেছিলাম। দু-এক দিন পরেই জমিতেই ধানগুলো মাড়াই করতাম। কিন্তু আরও অন্যদিকে ধান মারতে যাওয়ায় দেরি করছিলাম। কিন্তু তার আগেই রাতের অন্ধকারে কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। 

কৃষক মান্নান বলেন, ডিম বিক্রি করে খাই। সামান্য জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু আগুনে পুড়িয়ে সব শেষ করে দিল। ধানগুলো নিয়ে চলে গেলেও শান্তি পেতাম। কারণ সবগুলো ধান নিয়ে যেতে পারত না, কিছুটা হলেও থাকতো। কিন্তু আগুনে পুড়ে এখন সবকিছু শেষ। 

ধার-দেনা ৩০ কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন দিনমজুর রফিক। তিনি জানান, ধান পুড়ে ২৫ হাজার টাকা মতো দেনা হয়ে গেল। অন্য কোনো ধান নেই আর। সব শেষ হয়ে গেল। আল্লাহকে বিচার দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। সন্ধ্যার দিকে দেখে এসেছিলাম। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। সকালে শুনলাম আগের মতো করে আমার জমিতেও আগুন লাগিয়েছে। জমিতে গিয়ে দেখি সব ধান পুড়ে ছাই  হয়ে গেছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা খাবির উদ্দিন জানান, রোববার যে দুজনের ধান পুড়েছে তাদের কম ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দিবাগত রাতে দেড় বিঘা জমির ধান পুড়েছে রফিকের। তার আর কোনো ধান বা আয়ের উৎস নেই। রফিক খুব অসহায় হয়ে গেছে। যে বা যারাই এ কাজটি করুক, তা অত্যন্ত অমানবিক ও গর্হিত কাজ। একই মাঠে গত কয়েকদিন থেকে দুই দফায় ৩ জন কৃষকের ধানে আগুন দেয়া হলো। এটি অবশ্যই কাকতালীয় বা বিছিন্ন ঘটনা নয়। শত্রুতা থাকলেও তো সবার সঙ্গে হওয়ার কথা না। বিষয়টি নিয়ে এলাকার কৃষক ও শ্রমিকরা খুবই আতঙ্কে রয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলে রাব্বী রেনু ঢাকা পোস্টকে জানান, আগুনে ধান পোড়ার পর ৩ জন কৃষক আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। রাতের অন্ধকারের ঘটনা, এতে সন্দেহের প্রেক্ষিতে কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তাই তাদেরকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দিয়েছি৷ আগুনে ধান পোড়া ৩ জন কৃষকই খুবই অসহায় বলে জানান তিনি। 

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বা ইউপি সদস্য কেউ বিষয়টি আমাকে জানায়নি। রাতের মধ্যেই স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউপি সদস্যের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করব। কে বা কারা এমন কাজ করছে, সেই বিষয়েও খোঁজ নেব। ইউনিয়ন পরিষদ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে রয়েছে। 

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জাহান মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে জানান, এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

চাঁঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জাহাঙ্গীর আলম/এমএএস