আজ ঠাকুরগাঁওমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বীর বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করেন। লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে উল্লাসে মেতে উঠে এ অঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে হানাদারমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও।

এই দিনে ঠাকুরগাঁও মহকুমায় মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী মানুষের দুর্বার প্রতিরোধে পতন হয় পাকিস্তানি বাহিনীর। পাকিস্তানি সেনাদের পতনের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দ উদ্বেলিত কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকেন তরুণ-যুবক সবাই।

যে সব মানুষের আত্মত্যাগে দেশ শত্রুমুক্ত হয়েছিল তাদের স্মরণে হানাদারমুক্ত দিবস পালনে এবার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগ ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেই সব কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। দিবসটি পালনে সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সবার।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকসেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালির ওপর। তাদের প্রতিরোধ করতে সারাদেশসহ ঠাকুরগাঁওবাসীও গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন।

ঠাকুরগাঁও মহকুমা ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রেন লিডার খাদেমুল বাশার। সমগ্র সেক্টরে ১ হাজার ১২০টির মতো গেরিলা বেইস গড়ে তোলা হয়। ৮ মে’র আগ পর্যন্ত সুবেদার কাজিম উদ্দিন এর দায়িত্বে ছিলেন। ৯ মে ক্যাপ্টেন নজরুল, কাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে স্কোয়াড্রেন সদরু উদ্দিন ও ১৭ জুলাই ক্যাপ্টেন শাহারিয়া সাব সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয় বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও হরিপুর থানা অঞ্চলে। ২৯ নভেম্বর তৎকালীন ঠাকুরগাঁও মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। এরপর পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। তারা প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ে।

৩০ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনারা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভুল্লী ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। তারা সালন্দর এলাকায় সর্বত্র বিশেষ করে ইক্ষু খামারে মাইন পুঁতে রাখে। পরে ভুল্লী ব্রিজ সংস্কার করে ট্যাংক পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়।

এর আগে ১ নভেম্বর কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাগণ ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে ঢুকে। ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। ওই রাতেই শত্রু বাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর বিজয়ের বীর বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।

স্বদেশের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে আনন্দ উল্লাস করে এলাকার মুক্তিকামী মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতার পর কেউ দিবসটি পালনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কয়েক বছর ধরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মুক্তি শোভাযাত্রা, মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শন, নাটক, সম্মাননাসহ দিনব্যাপী কিছু অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ সিদ্দিকি বলেন, লাল-সবুজের পতাকা অম্লান রাখতে যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আর যারা সহযোদ্ধা ছিলেন তাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরাবরের ন্যায় এবারেও নানা আয়োজনে পালন হবে ঠাকুরগাঁওমুক্ত দিবস। আমরা এবার সেটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরের বছরগুলোতে সেটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হবে।

এমএসআর