ব্র্যাক ও ইস্টার্ন ব্যাংকে দুটি ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করার পর এনআরবিসি ব্যাংক থেকে নেওয়া ৯০ লাখ টাকার ঋণের নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়। অথচ আমি ব্যাংক থেকে কোনো ঋণই নেইনি। ঋণের জন্য কোনো আবেদনও করিনি। এনআরবিসি ব্যাংকে হিসাব খোলার পর কোনো দিন ব্যাংকেও যায়নি। অথচ আমার নামে ৯০ লাখ টাকা ঋণ অনুমোদন দিয়েছে ব্যাংক। এ নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার এনআরবিসি ব্যাংকের কলারোয়া শাখায়।

প্রতারণার শিকার হয়েছেন খুলনা জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ অহিদুল ইসলাম। তিনি খুলনার রাজীব মটরস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। এ ঘটনায় অহিদুল ইসলাম খুলনার দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যেখানে তিনি এনআরবিসি ব্যাংকের কলারোয়া শাখা ব্যবস্থাপক গাজী মোশারফ হোসেন, ব্যাংক কর্মকর্তা সাহেদ শরীফ, বদিয়ার রহমান ও ব্যবসায়ী আব্দুল হালিমসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে বিবাদী করা হয়েছে। 

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম জানান, ব্যাংকের গ্রাহক শেখ অহিদুল ইসলাম ব্যাংকে ঋণের জন্য কোনো আবেদন করেননি বা ঋণও গ্রহণ করেননি। অথচ তার নামে ৯০ লাখ টাকার ঋণ গ্রহণ দেখানো হয়েছে। মূলত এটি নিয়েই সাধারণ একটি ডায়েরি করেছেন তিনি। এটি আমাদের তদন্তের কোনো বিষয় নয়। সে কারণে সাধারণ ডায়েরিটি নথিভুক্ত করে দুদক খুলনা কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

ব্যাংকের গ্রাহক শেখ অহিদুল ইসলাম সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, এনআরবিসি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা এক বছর আগে আমার অফিসে আসেন পূর্ব পরিচিত এক ব্যবসায়ী আব্দুল হালিমের সঙ্গে। তারা আমাকে ব্যাংকটিতে একটি হিসাব খোলার অনুরোধ করেন। সে অনুরোধে ব্যাংক হিসাবের একটি ফরমে আমি স্বাক্ষর করি ও ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়েছিলাম। তারপর থেকে ব্যাংকটির কোনো কর্মকর্তার সঙ্গেই আমার দেখা বা যোগাযোগ হয়নি। হিসাবটি আদৌ সচল হয়েছে কি না সেটিও আমি জানতাম না। নভেম্বর মাসে ব্র্যাক ও ইস্টার্ন ব্যাংকে আমি দুটি ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করি। তখন আমাকে এনআরবিসি ব্যাংক থেকে নেওয়া ৯০ লাখ টাকার ঋণের নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়। 

পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোয় (সিআইবি) খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, এনআরবিসি ব্যাংকের সাতক্ষীরার কলারোয়া শাখা থেকে আমার নামে ৯০ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বেশির ভাগ ঋণ পরিশোধ করায় হিসাব স্থিতি ৯ লাখ ৩২ হাজারে নেমে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপক গাজী মোশারফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিসহ অন্য কর্মকর্তারা ভুল স্বীকার করে ঋণটি সমন্বয় করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

ঘটনার বিষয়ে শেখ অহিদুল ইসলাম জানান, আমি কোনো দিন ব্যাংকে গেলাম না, অথচ আমার নামে ৯০ লাখ টাকার ঋণ। এটি সুস্পষ্টভাবে প্রতারণা ও জালিয়াতি। বিষয়টি জানার পর এনআরবিসি ব্যাংকের কলারোয়া শাখার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করে ঋণটি সমন্বয় করে দিয়েছেন। আবেদন না করেও যে ব্যাংক ঋণ হয় সেটি আমার জানা ছিল না। এ ঘটনায় আমি একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।  

এনআরবিসি ব্যাংক কলারোয়া শাখা ব্যবস্থাপক গাজী মোশারফ হোসেন বলেন, শেখ অহিদুল ইসলাম খুলনার রাজিব মটরসের স্বত্বাধিকারীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তার সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি মীমাংসাও হয়ে গেছে। নথিপত্র যাচাই-বাছাই করেই ঋণটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পে-অর্ডারের মাধ্যমে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধ হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর ৭৩তম শাখা হিসেবে উদ্বোধন করা হয়েছিল ব্যাংকের কলারোয়া উপজেলা সদরের এ শাখাটি। উদ্বোধনকালে এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক ড. নুরুন নবীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আকরামুল ইসলাম/এসপি