সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ২ হাজার ৫০০ বরযাত্রী নিয়ে হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করতে গেছেন মো. রতন প্রামানিক (২৫) নামে এক ইরাক প্রবাসী। এ ঘটনায় এলাকায় রীতিমতো হৈ চৈ পড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে তাড়াশ পৌর এলাকার কোহিত মহল্লায় এই বিয়ের আয়োজন করা হয়। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখতে বিয়েবাড়িতে ভিড় করেন উৎসুক জনতা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোহিত মহল্লার বাসিন্দা তাড়াশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রব্বেল প্রামানিক এলাকায় বেশ পরিচিত। প্রায় বছর ২৫ বছর আগে তার বড় ভাই মো. একদিল প্রামানিকের স্ত্রী সন্তান প্রসবের পর মারা যান। ওই সময় রব্বেল প্রমানিক ও তার স্ত্রী কমেলা খাতুন মা হারা নবজাতক ছেলে সন্তানকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাকে কোলে তুলে নিয়ে নাম রাখেন মো. রতন প্রমানিক। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সামনে ঘোষণা দেন ছেলে বড় হলে তাকে হাতির পিঠে চড়িয়ে বিয়ে করাতে নিয়ে যাবেন এবং হাতির পিঠে চড়িয়ে নতুন বউমাকে বাড়িতে নিয়ে আসবেন। সেই থেকেই মো. রতন প্রামানিক ওই বাড়িতেই বড় হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি জীবিকার তাগিদে ইরাকে পাড়ি জমান। দীর্ঘদিন সেখানে থাকার পর সম্প্রতি দেশে ফিরে আসেন। 

বৃহস্পতিবার প্রবাসী রতন প্রামানিকের বিয়ের দিন ঠিক করা হয়। কনে একই উপজেলার মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের দিঘিসগুনা গ্রামের রইচ উদ্দিনের মেয়ে জোসনা খাতুন (২০)। 

এদিকে চাচা রব্বেল প্রামানিক সেই ২৫ বছর আগের দেওয়া ঘোষণার কথা রাখতে ছেলের বিয়েতে হাতি আনতে গত মঙ্গলবার বগুড়ায় যান। সেখানে গিয়ে দ্য লায়ন বুলবুল সার্কাসে একটি হাতি দুই দিনের জন্য ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে কোহিত মহল্লায় তার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। হাতির পিঠে চড়ে রতন বিয়ে করতে যাবে এমন খবরে এলাকার উৎসুক লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করেন। 

বৃহস্পতিবার সকালে বরের বাড়ির লোকজন ভাড়া করা হাতিকে গোসল করিয়ে সাজায়। পাশাপাশি হাতির শরীরে বর ও কনের নাম লিখে দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরযাত্রীরা বরকে হাতির পিঠে চড়িয়ে নিয়ে যান কনের বাড়িতে।

বর মো. রতন প্রামানিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবা-মায়ের (চাচা-চাচি) সখ পূরণ করতে হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করতে গেছি। এই অনুভূতি প্রকাশ করবার মতো নয়। 

একাধিক বরযাত্রী জানান, এ অঞ্চলে হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করার ঘটনা সচরাচর ঘটে না। তাই বিষয়টি উপভোগের বিষয় ছিল।

বরের চাচা রব্বেল প্রামানিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সখ মেটাতেই ছেলেকে (ভাতিজা) হাতিতে চড়িয়ে বিয়ে করাতে নিয়ে গেছি। এই বিয়েতে মোট ২ হাজার ৫০০ বরযাত্রী গিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯শ জন আত্মীয়-স্বজন ও বাকিরা আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষ। আগামীকাল বউভাতের অনুষ্ঠানে আমার বাড়িতে  কনের বাড়ি থেকে সাড়ে ৩ হাজার লোক আসার কথা রয়েছে। 

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর