অচেনা ক্যাম্পাস, নেই হুল্লোড়
রাজশাহী কলেজের ফাঁকা ক্যাম্পাসের চিত্র
এইচএসসির ফল ঘোষণা হয়েছে শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে। কিন্তু চিরচেনা দৃশ্যপট নেই শিক্ষা নগরীখ্যাত রাজশাহীর কলেজগুলোতে। নেই শিক্ষার্থীদের হুল্লোড়, আনন্দ-উচ্ছ্বাস।
রাজশাহীর ছোটবড় সকল কলেজেই একই দৃশ্যপট। দু’একজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এসেছেন ক্যাম্পাসে। নেই কোনো রাখঢাক। একেবারেই অচেনা ক্যাম্পাস।
বিজ্ঞাপন
একই দৃশ্য দেশসেরা রাজশাহী কলেজেরও। এইচএসসির ফলাফলে বরাবরই বোর্ডে সেরা দশে থাকে এই মডেল কলেজ। প্রত্যেকবার ফল প্রকাশের আগে কলেজ ক্যাম্পাস জড়ো হন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ফল পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হন সকলেই। চলে মিষ্টিমুখ ও ফটোসেশন। কিন্তু এবার সেই চিত্র পুরোপুরি অনুপস্থিত। সকালের দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে দু’একজন শিক্ষার্থী এলেও তারা ফিরে যান যে যার মতো।
বিজ্ঞাপন
ক্যাম্পাসে কথা হয় রেজাল্ট নিতে আসা কলেজেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ আফরিন রহমান সোনালীর সঙ্গে। তিনি জানান, তিনি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই ফলাফলে তিনি খুশি।
তিনি আরও বলেন, খারাপ লাগছে এই ভেবে অন্যান্য বার ফল প্রকাশের পর কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই শিক্ষার্থীদের মিষ্টিমুখ করান। এবার সেই আয়োজন নেই। বন্ধু-বান্ধবরা কয়েকজন মিলে তারা ক্যাম্পাসে এসেছেন।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন হৃদিতা রাজ্জাক। তারও অনুভূতি একই। তিনি জানান, তিনি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। কিন্তু তার কোনো উচ্ছ্বাস নেই। কারণ বন্ধুরা নেই ক্যাম্পাসে। আনন্দ কারো সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারছেন না।
রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল খালেক জানান, প্রতি বছর ফল প্রকাশের দিনে কলেজ ক্যাম্পাস আনন্দমুখর থাকে। শিক্ষার্থীরা দলে দলে আসে, ফলাফল পেয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা করোনার জটিল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই কারণে এইচএসসির ফল প্রকাশ হয়েছে অনলাইনে। বাড়িতে বসেই ফল পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। ফল নিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জমায়েত না হওয়ার নির্দেশ ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। শিক্ষার্থীদের ছাড়াই আনন্দহীন পরিবেশে ফল প্রকাশ হলো এবার।
উপাধ্যক্ষ আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ ছিল এতদিন। ফল প্রকাশ নিয়ে অনিশ্চয়তাও ছিল তাদের। কিন্তু ফল প্রকাশের পর তারা সেই অনিশ্চয়তা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন প্রস্তুতি নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবে।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালে বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৯ হাজার ৯৭৬ জন। এর মধ্যে ৮০ হাজার ১২৯ জন ছাত্র এবং ৬৯ হাজার ৮৪৭ জন ছাত্রী। এদের প্রত্যেককেই উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে। এদের মধ্যে জিডিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৫৬৫ জন ছাত্র এবং ১৪ হাজার ৩ জন ছাত্রীসহ মোট ২৬ হাজার ৫৬৮ জন।
৭৫৬টি কলেজ থেকে পরীক্ষায় বসার কথা ছিল শিক্ষার্থীদের। এজন্য প্রস্তুত ছিল ১৯৯টি কেন্দ্র। কিন্তু করোনা মহামারি সব আয়োজন ভেস্তে দেয়।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি