কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে টাকা ও ফ্ল্যাট নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে পরিকল্পিতভাবে পরাজিত করার অভিযোগ উঠেছে। কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন ফিলিপনগর ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম ফজলুল হক।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ফজলুল হক ৫ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে সংসদ সদস্যসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ তুলে ধরেন। সরওয়ার জাহান দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। তার বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়নে। তবে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, ‘একটি চক্র ষড়যন্ত্র করে এ কাজ করছে।’

গত ২৮ নভেম্বর দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে তৃতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগ, দুটিতে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আটটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী জয়ী হয়েছেন। আর সংসদ সদস্যের নিজের বাড়ি ফিলিপনগরেও নৌকার পরাজয় হয়েছে। সেখানে জয়ী হয়েছেন আরমা গ্রুপের কর্ণধার আবদুর রাজ্জাকের ছোট ভাই ও ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি নঈম উদ্দিন। পরাজিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক পান ৪ হাজার ৫৯৩ ভোট। অপর দিকে চশমা প্রতীকে নঈম উদ্দিন পান ৭ হাজার ১৪০ ভোট।

লিখিত অভিযোগে ফজলুল হক উল্লেখ করেছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হায়দার আলী অর্থ নিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন। ভোট মেরে নঈম উদ্দিনকে জয়ী করেন এমপির লোকজন। তার লোকজন নৌকার ভোট না করে তার সমর্থিত উপজেলা ও ইউনিয়নের সব নেতাকে বিএনপি নেতা নঈম উদ্দিনের পক্ষে ভোট করার নির্দেশ দেন।

সংসদ সদস্যের নির্দেশে ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুল মাস্টার, নাসির উদ্দিন, শহিদুল ইসলামসহ অন্য নেতারা প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র থেকে সংসদ সদস্যের লোকজন তার সমর্থকদের বের করে দেন।

ফজলুল হক উল্লেখ করেন, ছোট ভাইকে বিজয়ী করতে আরমা গ্রুপের কর্ণধার আবদুর রাজ্জাকের কাছ থেকে সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান ফ্ল্যাট উপহার নেন। তারই ধারাবাহিকতায় নিজের আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে নৌকাকে সুপরিকল্পিতভাবে পরাজিত করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, অনেক কিছুই শোনা যাচ্ছে। নেতারা মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন এক রকম আর ভেতরে ভেতরে গেম খেলেছেন অন্য রকম। বিষয়টি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার একটিও সত্য নয়। কোথায় ফ্ল্যাট নিয়েছি, সেটা প্রমাণ দেখাতে হবে। আমি দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকাতে দিলু রোডে ভাড়া বাসায় থাকতাম। ইউপি নির্বাচনের অনেক আগে ২০১৭ সালে আমি ঢাকাতে ফ্ল্যাট কিনেছি। ফজলুর এলাকায় কোনো জনপ্রিয়তা নেই। তার বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে।

ইউপি নির্বাচনে দৌলতপুরে আওয়ামী লীগের খারাপ ফলাফলের বিষয়ে তিনি বলেন, দৌলতপুরে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে দুর্বলতা ছিল। ১৪টি ইউনিয়নেই বর্তমান চেয়ারম্যানরা নৌকা প্রতীক পায়। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ ছিল জনগণের। জনগণের কাছ থেকে তারা দূরে চলে গিয়েছিল। জনগণ ব্যালটে তার প্রমাণ দিয়েছে। একটি চক্র কারও পরামর্শে আমাকে হেয় করতে কাজ করছে। উপজেলার সব ইউনিয়নে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। জনগণ যাকে ভোট দিয়েছে, সেই জিতেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী বলেন, এমপির বিরুদ্ধে লিখিতভাবে একটি গুরুতর অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দলীয় সভায় আলোচনা করে তদন্ত টিম গঠন করা হবে। কেউ যদি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় আর তা প্রমাণিত হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, সরোয়ার জাহান বাদশাহ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

রাজু আহমেদ/এসপি