আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে জয়পুরহাট সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের দিন যত নিকটে আসছে তত বাড়ছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনী এলাকাজুড়ে প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার ছেয়ে গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না নির্বাচন কমিশনের দেওয়া আচরণ বিধিমালা। এমনকি বিধি নিষেধ প্রয়োগে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের তৎপরতাও চোখে পড়েনি।

সদরের চকবরকত, দোগাছী, ধলাহারসহ কয়েকটি ইউনিয়নে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চলছে প্রচারণা।

নির্বাচন কমিশনের আইন রয়েছে প্রার্থীদের পোস্টার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত দেয়ালে লাগানো যাবে না। কিন্তু সেটা কেউই মানছেন না। বিভিন্ন ঘরের দেয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি, শৌচাগার, গাছে গাছে প্রার্থীদের পোস্টার লাগানো হয়েছে। এতে বাদ যায়নি স্কুলের দেয়ালও।

ধলাহার ইউনিয়নের ভানাইকুশলিয়া এলাকায় গাছে গাছে মাইক প্রতীকের পোস্টার লাগাচ্ছেন দুইজন ব্যক্তি। তারা বলেন, সব জায়গাতে আমাদের পোস্টার লাগাতে বলা হয়েছে। এজন্য গাছে গাছে, দেয়ালে পোস্টার লাগানো হচ্ছে।

চকবরকত ইছুয়া নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে বিভিন্ন প্রার্থীদের পোস্টারে ভরে গেছে। সেখানে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজেরা খাতুন লিলির মোটরসাইকেল প্রতীক, ইউপি সাধারণ সদস্য পদে সায়েম মোল্লার মোরগ প্রতীক, আমিনুর ইসলাম আফিলের বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক, আ. হাকিম মন্ডলের ফুটবল প্রতীক, মাহবুব আলমের টিউবওয়েল প্রতীক, মোকাদ্দেছুর রহমানের আপেল প্রতীকসহ অনেক প্রার্থীর পোস্টার লাগানো হয়েছে। সেখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পোস্টারও রয়েছে।

জানতে চাইলে ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাহান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার পোস্টার আমি লাগাতেই পারিনি। ২০ হাজার পোস্টার এনেছি। ওই রকমই আছে। দেয়ালে দেয়ালে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পোস্টার মেরেছে। আমার পোস্টার দেয়ালে বা গাছে মারা হয়নি। যদি কেউ নিজে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে মারে তা শখ করে মেরেছে।

ওই ইউনিয়নে ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য পদের প্রার্থী সায়েম মোল্লা বলেন, দেয়ালে পোস্টার লাগানো যাবে না, কিন্তু লাগানো হয়েছে। এগুলো তুলে ফেলে দেব। একই ওয়ার্ডের প্রার্থী আমিনুর ইসলাম আফিল বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও দেয়ালে পোস্টার মেরেছে। এজন্য আমরাও মেরেছি। দেয়ালে, গাছে-গাছে নৌকা মার্কা, আনারস, মোটরসাইকেল, ঘোড়া মার্কার পোস্টার মারা হয়েছে। আমরা ছোট প্রার্থী। কী করব, তাদের দেখে আমরাও লাগিয়েছি।

চকবরকত ইউনিয়নের পাহুনন্দা গ্রামের এক ভোটার বলেন, এখন থেকেই শোনা যাচ্ছে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে না। ভোট কেমন হবে জানি না। অনেকেই বলছেন, এবার ভোটের দিন মারামারি হতে পারে। যদি মারামারির ঘটনা না ঘটে তাহলে ভোট দিতে যাব।

জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান মিঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনী এলাকায় দেয়ালে, গাছে-গাছে পোস্টার লাগানো যাবে না। এমন অচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং এই বিষয়গুলো আমি দেখছি।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৬ ডিসেম্বর জয়পুরহাট সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে এক ইউনিয়ন ছাড়া আটটি ইউনিয়নে ৩২ জন প্রার্থী এবং নয়টি ইউনিয়নে সংরক্ষিত আসনে ১৩৩ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৫১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নয়টি ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৯৮ জন।

চম্পক কুমার/এমএসআর