পাবনায় গুলিতে নিহত চেয়ারম্যান প্রার্থীর জানাজায় মানুষের ঢল
পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের গোলাগুলিতে নিহত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলমের (৪০) নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৪টায় ভাড়ারা ইউনিয়নের আওরঙ্গবাদ হাফিজিয়া মাদরাসা মাঠের জানাজায় হাজারো শোকার্ত মানুষের ঢল নামে।
বিজ্ঞাপন
জানাজায় রাজনৈতিক লোকজনের পাশাপাশি অংশ নেন হাজারো সাধারণ জনগণ। জানাজা মাঠে মানুষের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় এক হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। খুনিদের বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে জানাজা ময়দান।
ভাড়ারা ইউনিয়নের ওহিদুল মাস্টারের সঞ্চালনায় জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ভাড়ারা ইউনিয়নের পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে এই চেয়ারম্যান অস্ত্র ও সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সে এখন তার টাকা ও ক্ষমতার জোরে সাধারণ জনগণের ওপর গুলি করছে। গত বছর এই মাঠেই আমরা জোড়া খুনের জানাযা পড়েছি। সেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত থাকলেও পরে নাম বাদ পড়ে যায়। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো হয়নি। সেটিতে যদি তার বিচার হতো তাহলে আজ আবার পুনরায় হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত করতে পারত না।
বিজ্ঞাপন
বারবার এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে থাকতে চায়। প্রশাসনের কাছে এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করছেন। আপনার কাছে বিনিত অনুরোধ ভাড়ারা ইউনিয়নের এই খুনিদের বিচার করেন। ইউনিয়নে শান্তি আনতে আমরা আপনার সু-নজর চাই।
বিশেষ অতিথি পাবনা পৌরসভার মেয়র শরিফ উদ্দিন প্রধান বলেন, পাবনায় একটি অপশক্তির আশ্রয়ে এই সাঈদ চেয়ারম্যান এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, বারবার এলাকায় তিনি খুন করছেন। সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত। শহরের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে এলাকায় সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার রেইনা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোকনুজ্জামান, সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম। তারা সবাই খুনের সঙ্গে জড়িতদের আটক করে শাস্তি দেবে বলে আশ্বস্ত করেন।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন, ভাড়ারা ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ, বিশিষ্টি ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক গণি মোল্লা, দোগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হাসান, চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু খান মোস্তফা বাচ্চু, পাবনা জজ কোর্টের অ্যাডভোটেক রাকিবুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন আনছারি প্রমুখ।
এ সময় এলাকার অন্য বক্তারা বলেন, এই ইউনিয়নে আর কত খুন হলে বর্তমান চেয়ারম্যান শান্ত হবে? অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সেই সঙ্গে শত শত অস্ত্র কিনে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে বারবার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করছে। তার বিরুদ্ধে হাজারো হত্যার প্রমাণ থাকলেও ঢাকা থেকে মনোনয়ন ক্রয় করে কীভাবে? কোলাদিন ইন্দ্রারা মোড় থেকে তুলে নিয়ে নলদহ বাজারে ইয়াসিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আহত আরও পাঁচজন এখনো হাসপাতালের বেডে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছে। নিহত ইয়াসিন একজন সদা সাসোজ্জল মিষ্টভাষী ভদ্র ছেলে ছিল। তাকে ভারি অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী খুনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। পাশাপাশি যাদের ইন্ধনে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে তারা কোনোভাবেই রেহায় পাবে না। এর আগেও এই ইউনিয়নে ৪৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এই হত্যাকাণ্ড থেকে অপরাধীরা কোনোভাবেই বাঁচতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন জানাজায় অংশ নেওয়া দলীয় নেতারা।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে ভাড়ারা ইউনিয়নের চারা বটতলার ইন্দারা মোড় কালুরপাড়া এলাকায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু সাঈদ খান ও তার লোকজন এবং ভাড়ারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের সুলতান মাহমুদের লোকজনও বের হয়। বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতান মাহমুদের আপন চাচাতো ভাই আনারস প্রতীকের ইয়াছিন আলম জড়ো হলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এ সময় উভয় পক্ষের ১২ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াছিন আলম নাটোরের বনপাড়ায় মারা যান। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন স্থগিতও করা হয়েছে। নিহতের বাবা বাদী হয়ে ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৪০/৪৫ জনের নামে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে। ইতোমধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
রাকিব হাসনাত/আরআই