ফরিদপুরে বিতর্কিত ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানকে ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় বিক্ষুব্ধরা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করেছে। এতে পুলিশের ৩ সদস্য আহত হন। এ সময় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করার ঘটনাও ঘটে। পুলিশ শর্টগানের ২২টি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রোববার (১২ ডিসেম্বর) রাত ১০টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর এলাকায় অবস্থিত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দক্ষিণ পাশে নির্মাণাধীন আমজাদ সরদারের জুট মিল মাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ওই মাঠে মারকাযুত তাকওয়া ইসলামি মাদরাসা ও সরদার বাড়ী জামে মসজিদের উদ্যোগে বার্ষিক এ ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল গতকাল।

জানা যায়, ওই ওয়াজ মহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল তরুণ ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের। রোববার সন্ধ্যা থেকে ওয়াজ মাহফিল শুরু হয়। রাত সাড়ে নয়টার পরে ওয়াজ মহফিল মঞ্চে কমিটির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় প্রশাসনের আপত্তির কারণে প্রধান বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান বক্তব্য দেবেন না। তখন ওয়াজ মাহফিল সমাপ্ত ঘোষণা করে কমিটি।

মাহফিলে উপস্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই সময় ওয়াজ মাহফিলের মাঠে প্রায় ১১ থেকে ১২ হাজার শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘোষণায় শ্রোতাদের একটা অংশ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

বিক্ষুব্ধ জনতা রাতেই পাশের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের ক্ষুদ্র একটি অংশ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় অর্ধকিলোমিটার দূরে অবস্থিত করিমপুর পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করে। বিক্ষুব্ধরা ইট ছুড়ে এবং ফাঁড়িতে থাকা পুলিশের দুটি গাড়ি ও একটি অ্যাম্বুলেন্সের কাচ ভেঙে ফেলে।

পরে ফরিদপুর থেকে দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শর্টগানের গুলি ছুড়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তারা ফরিদপুর সদর হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (দায়িত্বরত কর্মকর্তা) পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন শাহ বলেন, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশ সদস্যদের আহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ বিষয়ে ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের তত্ত্বাবধায়ক রকিব আল হাসান সরদার বলেন, আবু ত্বহাকে দিয়ে ওয়াজ করানোর ব্যাপারে পুলিশ সীমিত পরিসরে ঘরোয়াভাবে আমাদের এ অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়েছিল। তবে রোববার রাতে ওয়াজ মাহফিলে হাজার হাজার জনতা উপস্থিত হয়ে যায়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল ফোন করে আমার বাবাকে বলেন, আবু ত্বহাকে মঞ্চে ওঠানো যাবে না। তখন বাবাকে মামলার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে আমরা ওয়াজ মাহফিলে আগতদের উদ্দেশে মাফ চেয়ে মাহফিল শেষ করে দিই।

তিনি আরও বলেন, যারা ফাঁড়িতে হামলা করেছে, সড়ক অবরোধ করেছে, তারা গুটি কয়েক উগ্রপন্থী। তাদের সঙ্গে আমাদের (ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকদের) কোনো সম্পর্ক নেই। পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেই হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে পারবে পুলিশ। তবে তিনি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলার নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ জানান।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ওয়াজ মাহফিল করতে হলে উপজেলা থেকে অনুমতি নিতে হয়। ত্বহাকে আনার ব্যাপারে এবং ওই ওয়াজ মাহফিলের ব্যাপারে কোনো অনুমতি প্রশাসন ওই কমিটিকে দেয়নি। পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

জহির হোসেন/এনএ