অবশেষে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সেলিমের। ১৩ হাজার টাকা চেয়ে ভর্তির আকুতি জানিয়েছিল সে। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত ৩৭ হাজার টাকা পাচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

৩৭ হাজার টাকার মধ্যে ইতোমধ্যে ২৭ টাকা নগদ ও বিকাশে পেয়েছেন। বাকি ১০ হাজার টাকা নিউ ইয়র্কের কুইন্স থেকে পাঠানো হয়েছে যা তার বিকাশ অ্যাকাউন্টে এসে পৌঁছাবে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে।

এর আগে ‘৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত সেলিমের’ শিরোনামে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা পোস্টে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে নানা মাধ্যম থেকে সহযোগিতা আসতে শুরু করে।  

মো. সেলিম ভূঞা রায়পুরা উপজেলার আমীরগঞ্জ ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের মো. হযরত আলী ভূঞার ছেলে। তিনি জন্ম থেকেই চোখে দেখতে পান না। তার বাবা হয়রত আলী পেশায় একজন দিনমজুর।

সেলিমের পরিবার ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০০ সালের ৬ জুন সেলিমের জন্ম। জন্ম থেকেই সেলিমের চোখে দৃষ্টি নেই। ছয় বছর বয়সে হাসনাবাদ ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ২০১২ সালে এখান থেকেই জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন হাসনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে।

সেখান থেকে ২০১৬ সালে জেএসসিতে জিপিএ-৫ এবং ২০১৮ সালে জিপিএ- ৪.২৮ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। তারপর ভর্তি হন নরসিংদী সরকারি কলেজে। সেখান থেকে ২০২০ সালে মানবিক বিভাগে জিপিএ- ৪.৭৫ পেয়ে  এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস করেন।

২০২০-২১ সেশনে গুচ্ছ পরীক্ষায় ৩৫.৫ মার্ক পেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে সে।

সেলিমের ভর্তি ও পড়াশোনায় এগিয়ে এসেছে ‘হাসনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় শেকড় থেকে শিখরে’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী মেহেরুন্নেসা লিমি এবং নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া ঢাকার এক শিক্ষার্থী। 

নিউ ইয়র্ক প্রবাসী মেহেরুন্নেসা লিমি বলেন, আমি ১২০ ইউএসডি পাঠিয়েছি যা বাংলায় ১০,২০০ টাকা। এই টাকা আগামী ২৬ তারিখের মধ্যে সেলিমের বিকাশ নম্বরে ঢুকবে। 

‘হাসনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় শেকড় থেকে শিখরে’ নামে ফেসবুক গ্রুপেরর অ্যাডমিন মোস্তাফিজুর রহমান মামুন বলেন, দুই প্রবাসী ১২ হাজার টাকা আমাদের দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে আমরা সেটি সেলিমের হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা তার পরবর্তী সময়ের পড়াশোনার দিকেও খেয়াল রাখব।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সেলিম ভূঞা বলেন, ঢাকা থেকে এক ভাই ১৫ হাজার টাকা দিয়েছে বিকাশে, ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ১২ হাজার নগদ টাকা মঙ্গলবার বিকেলেই আমার হাতে তুলে দিয়েছে মারুফ ও মামুন নামে ওই গ্রুপের দুই সদস্য। এছাড়া নিউ ইয়র্ক থেকে আরও ১০ হাজার টাকা আসবে। সব মিলে ৩৭ হাজার টাকা হয়েছে। আমি এতেই অনেক খুশি।

রাকিবুল ইসলাম/এসপি