রাস্তার মোড়ের পাশে খোলা ফলের দোকান। তাতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ফল। রয়েছে লাল-হলুদ রঙের আমও। একেকটি আমের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ১০০ গ্রাম। সাজিয়ে রাখা আমের মধ্যে থেকে একটি আম নিয়ে ওজন করা হলো। পরিমাপে ১ কেজি ৫০ গ্রাম। ১৬০০ টাকা কেজি হিসেবে আমটি নিতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হবে ১৬৮০ টাকা। অস্ট্রেলিয়ান সূর্যডিম আমের পসরা নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশ্বরোড মোড়ে বসে আছেন বিক্রেতা হযরত আলী। 

হযরত আলীর ফলের দোকানে পেয়ারা ও তরমুজ ছাড়া বাকি সবগুলো ফলই বিদেশি। অস্ট্রেলিয়ান সূর্যডিম আম ছাড়াও এখানে আরও রয়েছে থাইল্যান্ডের জাম্বু ফলজি বা থাইকিউ জাই আম, চায়না হানি পামেলো লেবু (বাতাবি লেবু), রাম্বুটান, মিশরের কাঁচা খেজুর, থাইল্যান্ডের সুমিষ্ট আতা। 

মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্বরোড মোড়ের এই ফলের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, হযরত আলীর ছেলে জেলা শহরের ফুলকুঁড়ি ইসলামিক একাডেমির সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আবদুল আলিম শ্রাবণ (১৪) দোকানে বসে আছে। সে জানায়, তার বাবা বাসায় খেতে গেছেন। ফল বিক্রেতা হযরত আলীর বাড়ি জেলা শহরের বেলপুকুরে। তিনি ৭ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করেন। 

কথা হয় শ্রাবণের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে সে জানায়, লাল ও হলুদ বর্ণের সূর্যডিম আমগুলো অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছে। প্রথম চালানে ৮ পিস আনা হয়েছে। যার একটি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়েছে। ১৬০০ টাকা কেজি দরে আমগুলো বিক্রি হচ্ছে। ৩ দিন আগে ঢাকা থেকে এগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। সূর্যডিম আমের স্বাদ খুবই ভালো। বাকি আমগুলো একজন অর্ডার করেছেন। 

দেশি বাতাবি লেবুর মতো ফল রয়েছে এই দোকানে। এ ফল সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রাবণ জানায়, এটির নাম চায়না হানি পামেলো লেবু। এটি ৪৫০ টাকা কেজি। তবে পিস হিসেবে নিলে ক্রেতাদের গুনতে হবে ৬৫০ টাকা। এই লেবুর ওজন একেকটা দেড় কেজি করে। 

ফলের দোকানে আধা ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা যায়, অন্তত ১৫-২০ জন ক্রেতা দোকানে আসলেন। ফলের নাম ও দাম জিজ্ঞেস করেই তারা ফিরে যাচ্ছেন।

কথা হয় এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ফলগুলো দেখতে খুবই লোভনীয়। কিন্তু দাম শোনার পর তা আর কেনার ইচ্ছা থাকে না। বাইরের দেশ থেকে আনা বলে ফলগুলোর অনেক দাম।  

স্কুলশিক্ষক মোতাহার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমের জেলা হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। অথচ এই চাঁপাইনবাবগঞ্জেই আম বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা কেজি। এটা ভাবনারও বাইরে। লোভনীয়, আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু হলেও ফলগুলো শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকজনের জন্য। 

এরই মাঝে দোকানে আসে মালিক হযরত আলী। ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, সূর্যডিম আম ছাড়াও তার কাছে আরেকটি জাতের আম রয়েছে। থাইল্যান্ডের জাম্বু ফলজি বা থাইকিউ জাই আম। এর দাম প্রতি কেজি ১০০০-১২০০ টাকা।

তিনি আরও জানান, রাম্বুটান নামে মালয়েশিয়ান লিচুর দাম প্রতি কেজি ১৬০০ টাকা। ফলটি অনেক বিক্রি হয়েছে। দেশি লিচুর থেকে এটি অনেক মিষ্টি। বাংলাদেশেও এর চাষ শুরু হয়েছে, তবে এখন ফলন দেওয়ার সময় হয়নি। এছাড়া রয়েছে থাইল্যান্ডের আতা ফল। ৮০০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে এই আতাফল। একই দামে বিক্রি হচ্ছে মিশরের কাঁচা খেজুর। বিশেষ এই খেজুরটি আকারে সাধারণ খেজুরের তুলনায় অনেক বড় এবং কাঁচা অবস্থাতেই খেতে হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) বৈজ্ঞানিক আবু সালেহ মো. ইউসুফ ঢাকা পোস্টকে জানান, সূর্যডিম আমকে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম বলা হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তবে শুধুমাত্র আমের মৌসুমে সূর্যডিম আমের ফলন পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ায় এখন আমের মৌসুম, তাই ফলন বেশি। সেখান থেকে এনে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে আম বিক্রি করছেন।

জাহাঙ্গীর আলম/এসপি