ভুক্তভোগী নারী

ঢাকা থেকে সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে এসে গণধর্ষণের শিকার ওই নারী গত দুই মাসে তিনবার কক্সবাজারে এসেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই নারী ও তার স্বামী বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেফাজতে আছেন। ঘটনার বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতে নেওয়া হবে। স্বামী-সন্তানকে জিম্মি ও হত্যার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে দুই বার ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

গত বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাত দেড়টার দিকে কক্সবাজারের কলাতলীর ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামে একটি হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে র‌্যাব-১৫। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত তিনজনের মধ্যে দুইজনকে শনাক্তও করা হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার ওই নারী গত দুই মাসে তিন বার কক্সবাজার এসেছেন। আগেও দুই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ নিয়ে গেছেন। থানায় অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার কথা তার স্বামীও স্বীকার করেছেন।

আরও পড়ুন : নদীতে ঝাঁপিয়ে স্বামী-শাশুড়ি-মেয়েসহ বাঁচেন স্ত্রী, নিখোঁজ শ্বশুর

র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, গত বুধবার সকালে ঢাকা থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন ওই নারী। এরপর কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে ওঠেন। সেখান থেকে বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে যান। লাবণী পয়েন্টে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে ওই নারীর স্বামীর ধাক্কা লাগে। পরে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে সন্ধ্যায় স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে কয়েকজন যুবক তার স্বামী ও ৮ মাসের সন্তানকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। অপর একটি অটোরিকশায় তিন যুবক গৃহবধূকে তুলে নেয়। পরে তারা পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।

সেখান থেকে তাকে ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামে একটি হোটেলে নেওয়া হয়। সেখানেও তাকে আরেক দফা ধর্ষণ করে ওই যুবকরা। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে হোটেল কক্ষটি বাইরে থেকে বন্ধ করে পালিয়ে যায় তারা।

ওই নারীর দাবি, তিনি জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খুলে ৯৯৯-এ ফোন দেন। পুলিশ তাকে থানায় এসে সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়। তারপর অপর এক ব্যক্তির সহযোগিতায় কল দেন র‌্যাবকে। পরে র‌্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে। পর্যটন গলফ মাঠের এলাকা থেকে তার স্বামী ও সন্তানকেও উদ্ধার করা হয়।

ওই নারীর স্বামী বলেন, সামান্য ধাক্কা লাগার কারণে তারা আমার এমন ক্ষতি করবে তা কল্পনাও করিনি। শহর অপরিচিত তাই জায়গা ও তাদের চিনতে পারিনি। বারবার হাতে-পায়ে ধরলেও তারা আমার স্ত্রীকে ফেরত দেয়নি।

আরও পড়ুন : ইউটিউব দেখে কমলা চাষ, হতাশায় বাগান কাটলেন কৃষক

র‌্যাবের ভাষ্য মতে, ওই দুই যুবক হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম আশিক ও আব্দুল জব্বার জয়া। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। আশিক চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি ছিনতাই ও মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি। এ ঘটনায় হোটেল ম্যানজারকে আটক করা হয়েছে। এর আগে হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুজনকে শনাক্ত করার কথা জানায় র‌্যাব।

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, তিন যুবক অটোরিকশায় এক নারীকে নিয়ে আসেন। দুজন ওই নারীর সঙ্গে থাকেন। আরেকজন হোটেলের রুম বুকিং দেন। সে সময় রিসিপশনে হোটেলের ব্যবস্থাপক ছোটন ছিলেন। এরপর তিন যুবক ওই নারীকে নিয়ে ওপরে চলে যান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে যুবকরা বেরিয়ে গেলেও ওই নারীকে নামতে দেখা যায়নি।

র‌্যাব জানায়, এই ফুটেজ থেকে দুজনকে শনাক্তের পর ওই নারীকে তাদের ছবি দেখানো হয়। তিনি তাদের চিনতে পেরেছেন।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন। কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম আশিকসহ এজাহারে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তিনজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- আশিকের দুই সহযোগী ইস্রাফিল খুদা ওরফে জয় ও মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।

আরও পড়ুন : ধর্ষণে অভিযুক্তরা ওই নারীর পূর্বপরিচিত : পুলিশ

তবে ঘটনাটি ‘রহস্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, ধর্ষ‌ণের শিকার ওই নারী গত দুই মা‌সে তিনবার কক্সবাজার এসে‌ছেন। এর আগেও দুই সন্ত্রাসীর বিরু‌দ্ধে থানায় অভিযোগ করেন ওই নারী। তাই বিষয়টি একটু সন্দেহজনক।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস জানান, গত বছর আশিকের নেতৃত্বে কয়েকজন এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে সব কিছু ছিনিয়ে নেয়। এই মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। চার মাস আগে জেল থেকে বের হওয়ার পর তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দেখা যায়। আশিক এলাকায় মাদক কারবার ও যৌনকর্মী সরবরাহের কাজ করেন। জয় তার অন্যতম সহযোগী।

আরএআর