ধুমধাম করে শুক্রবার বিয়ের দিনক্ষণ পাকাপাকি হয়েছিল হাফসার (১৮)। বিয়ের কেনাকাটা করতে এক বছর বয়সী ভাই নাসিরুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় বাবার কাছে যান হাফসার মা পাখি বেগম (৩৫)। 

হাফসার বাবা আবদুল হাকিম (৪৫) ঢাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বড় মেয়ে হাফসার বিয়ের জন্য ব্যাংকে রাখা কিছু টাকা আর শাড়ি গয়না কিনে বাড়িতে ফিরবেন এমনই পরিকল্পনা ছিল তাদের। 

কেনাকাটা শেষ করে শিশু নাসিরুল্লাহকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে উঠেন আবদুল হাকিম ও স্ত্রী পাখি বেগম। এরপর আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাদের।

রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বরগুনার সার্কিট হাউসের সামনে নিখোঁজ মা-বাবা ও ভাইয়ের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনটাই জানাচ্ছিল হাফসা, সুমাইয়া ও ফজলুল করিম। অপরদিকে, সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বাবা-মা হারানো এই তিন শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার কথা জানান স্বজনরা।

নিখোঁজ হাকিম ও পাখি বেগম দম্পতির স্বজনরা জানান, আগামী শুক্রবার হাফসার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়। এরপর তারা ঢাকায় যায় কেনাকাটা করতে। গভীর রাতে লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা বাড়িতে থাকা তিন সন্তান ও স্বজনদের।

হাফসার নানি ফরিদা বেগম জানান, অনেক খোঁজাখুজি করেও আবদুল হাকিম, পাখি বেগম ও তাদের শিশুপুত্র নাসিরুল্লাহর কোনো সন্ধান মেলেনি। তবে আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে সন্ধান চালিয়ে হাফসার জন্য কেনা বিয়ের শাড়ি-কাপড়, গয়না, পুড়ে যাওয়া লাগেজ ও শিশু নাসিরুল্লাহর প্যান্ট শার্ট পাওয়া গেছে। 

হাফসার মামা নজরুল বলেন, বাবা-মায়ের মৃত্যুতে অনিশ্চিৎ হয়ে পড়েছে বড় মেয়ে হাফসা, মেজ মেয়ে সুমাইয়া এবং সেজ ছেলে ফজলুল হকের ভবিষ্যৎ। সবকিছুর পরেও লাশগুলো খুঁজে পেলে মনটারে একটু সান্ত্বনা দিতে পারতাম। অন্তত মা-বাবার কবরটা তো দেখতে পারত এতিম তিন ভাই-বোন।

এমএএস