বাইসাইকেলে মুসাব্বিরের ১৯৭১ কিলোমিটার পথ পাড়ি
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সাধারণ মানুষকে দেশপ্রেম ও স্বাস্থ্যসচেতনতায় উদ্বুদ্ধ করতে বাইসাইকেল চালিয়ে ১ হাজার ৯৭১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছেন মোসাব্বির জিসা জিন্নাহ। গত বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসে রাত ১২টা ১ মিনিটে রংপুর নগরের ধাপ চেক পোস্ট এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘অংশুমান’ চত্বর থেকে ১ হাজার ৯৭১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যাত্রা শুরু করেন।
ইতোমধ্যে ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী এ যুবক। দীর্ঘ এ পথযাত্রার শেষ গন্তব্য ধানমন্ডি-৩২-এ পৌঁছাতে আর বাকি আছে ৩২১ কিলোমিটার পথ।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, শুরুর দিনে রংপুর থেকে বাইসাইকেলে নীলফামারী জেলার জলঢাকা হয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে যান জিন্নাহ। সেখান থেকে ঠাকুরগাঁও হয়ে রুহিয়ার দিকে রওনা দেন। এর পরদিন রুহিয়া থেকে দিনাজপুর সদর ও গোবিন্দগঞ্জ হয়ে বগুড়া সদরে যান। তৃতীয় দিনে বগুড়া থেকে বাইসাইকেলে ঢাকা অভিমুখে যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুতে তাকে উঠতে হয় ট্রাকে। সেতু পার হয়েই ফের বাইসাইকেলের প্যাডেলে পা মাড়িয়ে ছুটতে থাকেন মোসাব্বির জিসা জিন্নাহ।
জিন্নাহ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে আইটি এক্সপার্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ঢাকা পোস্টকে উদ্যমী এই যুবক জানান, দীর্ঘ এই যাত্রা পথে চতুর্থ দিনে ঢাকা থেকে ভৈরব পৌঁছানোর সময় অসুস্থ হয়েছিলেন। সেখানে একটানা ৭৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পুরো এক দিন বিশ্রামে ছিলেন। এর পরদিন ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে কুমিল্লা, তারপর ফেনী সদরে যান। এভাবে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম দিদার মার্কেট, আবার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার। সেখান থেকে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ হয়ে পুনরায় কক্সবাজারে ফিরে আসেন। পরে সেখান থেকে চট্টগ্রাম দিদার মার্কেট হয়ে লক্ষ্মীপুর যান।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও জানান, লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলা হয়ে বরিশাল যাত্রা শেষ করে পিরোজপুরে যান। সেখান থেকে বাগেরহাট হয়ে খুলনার পথ ধরে গোপালগঞ্জে যাবেন। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) টুঙ্গিপাড়ায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর সেখান থেকে মঙ্গলবার চূড়ান্ত গন্তব্য বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার ধানমন্ডি-৩২-এ যাবেন। বর্তমানে তার শেষ গন্তব্যে পৌঁছাতে আর মাত্র ৩২১ কিলোমিটার পথ বাকি রয়েছে বলেও তিনি জানান।
মোসাব্বির জিসা দাবি করেন, দেশের স্বাধীনতা দিবস ঘিরে পতাকা সঙ্গে নিয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে এ ধরনের ইভেন্ট এর আগে হয়নি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরঙ্গনা, শহীদ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগঠকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোসহ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম ও সচেতনতার বার্তা পৌঁছাতে পেরেছেন বলেও তিনি জানান।
১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া হয়ে গেছে তার। বাইসাইকেলে ছুটতে ছুটতে কখনো মেঘে ঢেকে থাকা সূর্য, উষ্ণ আবহাওয়া। আবার কখনো শীত না গরম, কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। বরং দেশের পতাকা পিঠে বেঁধে চলতে চলতে মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। তিনি বলেন, অনেকেই হাত তুলে উৎসাহ দিয়েছিলেন। অনেকেই সেলফি তুলেছেন, কেউ কেউ ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময়ে দেশকে ভালোবাসার এবং স্বাস্থ্যসচেতনতার ব্যাপারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করেছি।
১ হাজার ৯৭১ কিলোমিটার পথ বাইসাইকেলে ছুটতে ছুটতে জেলায় জেলায় বহু মানুষের যেমন সাড়া মিলেছে, তেমনি অনেক সাইক্লিস্ট সংগঠন ও গ্রুপের বন্ধুদের কাছ থেকে পথ চেনার সহযোগিতাও পেয়েছেন মুসাব্বির জিসা। এর আগে ২০১৩ সালে বিশ্ব ইজতেমার সময় বাইসাইকেল চালিয়ে ঢাকা ৩৮ ঘণ্টায় রংপুর এসেছিলেন তিনি। এ ছাড়া চলতি বছরে গত ১২ নভেম্বর বাইসাইকেলে রংপুর থেকে বাংলাবান্ধা, ২৬ নভেম্বর এক দিনে রংপুর থেকে ঢাকা এবং ৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে এক দিনে রংপুরের যাত্রাপথ পাড়ি দেন মুসাব্বির জিসা।
পরিশ্রমী এই যুবক রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে পরিবারে মুসাব্বির জিসা মা-বাবার চতুর্থ সন্তান। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি পড়াশোনা শেষে বর্তমানে রংপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ