তৈরি করেন দামি ব্র্যান্ডের পোশাক, তবে ফুটপাতের ক্রেতা তারা
মনিরা বেগম। কাজ করেন সাভারের একটি পোশাক কারখানায়। তার হাতের ছোঁয়ায় নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি হয়ে বিভিন্ন দেশে রফতানি হলেও তিনি ফুটপাতের একজন ক্রেতা। ঢাকা পোস্টের কথা হয় তার সঙ্গে।
মনিরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করি। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারখানা চলে। কাপড় কেনার সুযোগ হয় না। এদিকে শীত বাড়ছে। আজ একটু আগেভাগে ছুটি হওয়ায় শিশুসন্তানের জন্য কাপড় কিনতে আসলাম।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক দামিদামি কাপড় সেলাই করি। সব বিদেশে যায়, এগুলোর নাকি অনেক দাম। আমরা শুধু দেখি আর সেলাই করি। আমাদের সাধও হয় না এসব কাপড় পড়ার। কারণ এত টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর এসব দেশে বিক্রিও হয় না। তবে মার্কেটে ভালো কাপড় পাওয়া যায়। সেগুলোও কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই।
ফুটপাতের অপর ক্রেতা পোশাকশ্রমিক আর্জিনা। তিনি বলেন, আমরা সবসময়ই ফুটপাত থেকে কাপড় কিনি। এখানকার কাপড় একেবারে খারাপ নয়। কিন্তু দামে মার্কেটের চেয়ে অনেক কম। সারা মাস কাজ করলে বেসিক বেতন সাড়ে ৮ হাজার টাকা। মার্কেটে একটা সোয়েটার কিনতে গেলে প্রায় তিন হাজার টাকা লাগে। আমাদের ফুটপাত ছাড়া উপায় নেই? সাধ থাকলেও সাধ্য নেই আমাদের। আমরা টাকা কামানোর জন্য ঢাকা শহরে এসে কাজ করছি। খেয়ে পড়েই যদি শেষ করি তাহলে বাড়িতে পাঠাব কী? তাই ফুটপাত থেকেই আমরা কেনাকাটা করি।
বিজ্ঞাপন
জামগড়া এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা সব সময় ফুটপাতেই ব্যবসা করি। যে সময়ে যে পণ্যের চাহিদা থাকে তাই বিক্রি করি। এখন শীত মৌসুম। তাই শীতের কাপড় বিক্রি করছি। আমাদের এখানে বেশির ভাগ ক্রেতাই পোশাকশ্রমিক। তাদের রুচি অনুযায়ী আমরা পোশাকসহ বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ করে থাকি।
বলিভদ্রবাজারের ফুটপাত ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, শ্রমিকরা অল্প দামে বেশি কেনাকাটা করে। তাই আমরা অল্প দামের জিনিসই বিক্রি করে থাকি। শীতের শুরুতে বেচা-বিক্রি একটু কম। বেতনের পর আমার দোকানে দুইজন লোক লাগবে। বেতনের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি বাড়বে। বেতন হলে পোশাকশ্রমিকরা কেনাকাটা করতে আসবেন। আগামী সপ্তাহে তাই নতুন নতুন মালামাল সংগ্রহ করব।
বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, ফুটপাত ব্যবসায়ীরা শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এদের ক্রেতা পোশাকশ্রমিক হওয়ায় তারা এখনও টিকে আছেন। তারা খুবই নিম্নমানের পোশাক বা পণ্য বিক্রি করেন। তবে নিত্যপণ্যের দাম চড়া হওয়ায় অনেকে ফুটপাত থেকেও পোশাক কিনতে পারবেন কি না জানা নেই। যারা দামি দামি পণ্যের রূপকার তারাই ফুটপাতের ক্রেতা। এটা দুঃখজনক।
এসপি