সারাদেশের মতো দিনাজপুরে জেঁকে বসেছে শীত। দিন দিন তাপমাত্রা কমায় শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। যার প্রভাব পড়েছে এলাকার খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষের ওপর। নিম্ন আয়ের মানুষরা শীত নিবারণে জন্য ভিড় করছেন দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে অবস্থিত শহীদ মিনার হকার্স মার্কেটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাটিতে পাটি কিংবা চট বিছিয়ে নানা ধরনের শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতা। শীতবস্ত্র কেনার জন্য চারপাশ ঘিরে ভিড় করছেন ক্রেতারা। এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে নতুন ও পুরোনো কোট, জ্যাকেট, সোয়েটার, চাদর, কম্বলসহ নারী ও শিশুদের নানা ধরনের বাহারি শীতের পোশাক। শুধু নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা নয়, ধনীরাও খরচ কমাতে কিনছেন এসব শীতবস্ত্র। পুরুষদের পাশাপাশি কম দামে শীতবস্ত্র কেনার সুযোগ হাতছাড়া করছেন না নারীরাও। 

বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। গত বছর শীত কম থাকায় ভালো ব্যবসা হয়নি। এ বছর শীত বাড়ায় কিছুটা আশাবাদী তারা। মেয়েদের সোয়েটারের দাম মানভেদে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, ছেলেদের সোয়েটার ৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ছেলেদের জ্যাকেট ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা, বাচ্চাদের সোয়েটার ৩০ থেকে ৬০০ টাকা, হাতের মোজা ৩০ থেকে ১৫০ টাকা। এছাড়া  মানভেদে টুপি ৪০-১০০ টাকা ও মাফলার ৫০-২৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

শীতের কাপড়ের পাশাপাশি বিক্রি বেড়েছে কম্বলের। শহীদ মিনার হকার্স মার্কেটের আল হেরা ট্রেডার্সের মালিক মনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কম্বল বিক্রি শুরু হয়েছে। তাই প্রতিবারের মতো আমি এবারও কম্বল তুললাম দোকানে। বিক্রি ভালো হচ্ছে। মানভেদে বিভিন্ন কম্বল ১৫০ থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

জেলার বিরল উপজেলা থেকে ছেলের জন্য শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন রাজিউল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর বেশ ঠান্ডা। নিজের কোনোমতে চলে গেলেও ছেলের জন্য একটি নতুন জ্যাকেট লাগবে। গার্মেন্টসের দোকানগুলোতে যে দাম তাতে আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তাই এখানে এসেছি।

শহরের মালদহপট্টি থেকে শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন শিলা রানী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামী সামান্য দিনমজুরের কাজ করে। যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। এবার শীত বেশি। তাই কম টাকায় শীতের পোশাক কিনতে এসেছি।

রমজান ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি প্রতি বছর এখান থেকে পরিবারের জন্য শীতের কাপড় কিনি। এখানে কম দামে ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায়।

দোকানদার মিজানুর ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা আর গত বছর শীত কম থাকায় ভালো ব্যবসা হয়নি। এবার কিছুটা ভালো। তবে ক্রেতারা কেনার থেকে অনেক কম দাম বলছে। সারা বছর বেচাকেনা হয় না তেমন। শীতের দুই থেকে তিন মাস একটু ভালো বেচাকেনা হয়। তা দিয়ে আমরা সারা বছর চলি।

আরেক দোকানদার জাবেদ জানান, এক সপ্তাহ ধরে একটু ভিড় বাড়ছে। এখানে সর্বনিম্ন বিশ টাকা থেকে বিভিন্ন দামের শীতের পোশাক পাওয়া যায়। 

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীত শুরুর আগেই শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ১৩ উপজেলায় ৫২ হাজার কম্বল ইউএনওদের মাধ্যমে বিতরণের জন্য পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু কেনার প্রক্রিয়া চলছে।

ইমরান আলী সোহাগ/এসপি