পাবনার ভাঙ্গুড়ায় শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে বিয়ের দাবিতে ছেলের বাড়িতে অবস্থান করছেন এক তরুণী। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) থেকে মেয়েটি অবস্থান করলেও শুক্রবার সকালে অভিযুক্ত বিপুলের বাড়ির লোকজন তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

অভিযুক্ত বুলবুল আহমেদ বিপুল (৩০) উপজেলার মন্ডতোষ ইউনিয়নের গজারমারা গ্রামের ইসমাইল হোসেনর ছেলে। ওই তরুণীর বাড়ি পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। 

ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চার বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে বিপুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের সম্পর্ক প্রেমে রূপ নেয়। এর কিছুদিন পর বিপুল তাকে দেখা করার জন্য চাপ দিলে সে তার সঙ্গে দেখা করে। পরে বিপুল তাকে তার বোনের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে এবং ঘটনাটি কৌশলে মুঠোফোনে ধারণ করে। 

পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে তাকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা হলে ওষুধের মাধ্যমে বাচ্চা নষ্ট করতে বাধ্য করে বিপুল। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ওই তরুণী বিপুলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও মুক্তি মেলেনি তার। এরপর সে বিপুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। 

বিপুল বিষয়টি এড়িয়ে যেতে শুরু করে। এ অবস্থায় সে মঙ্গলবার উল্লাপাড়া থেকে ভাঙ্গুড়া উপজেলার সিএনজি স্ট্যান্ডে এসে বিপুলের খোঁজ করতে থাকে। সেখানে উপস্থিত লোকজন বিপুলকে চিনতে পেরে খবর দেয়। বিপুল সেখানে উপস্থিত হলেও কৌশলে সেখান থেকে চলে যান। উপায় না দেখে সে বিয়ের দাবিতে বিপুলের বাড়িতে উপস্থিত হয়। 

বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আফসার আলী জানতে পারে এবং মেয়েটির যেন কোনো ক্ষতি না হয় তার নিরাপত্তায় গ্রাম পুলিশ নিয়োগ করেন। গ্রাম পুলিশের পাহারায় গত দুই দিন সেখানে থাকলেও আজ সকালে ওই তরুণীকে বিপুলের পরিবারের লোকজন মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এতে বিষয়টি জানাজানি হয়। 

এ বিষয়ে বিপুলের বাবা ইসমাইল হোসেন জানান, উচ্চ মহলের নির্দেশেই তিনি ওই তরুণীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।

ঘটনা শুনে চেয়ারম্যান আফসার আলী পুনরায় সেখানে উপস্থিত হয়ে বিপুলের বাবা ইসমাইল হোসেনকে তার ছেলেকে হাজির করতে চাপ প্রয়োগ করেন। পাশাপাশি ওই তরুণীকে যেন আর মারধর করা না হয় সেই বিষয়ে গ্রাম পুলিশকে নির্দেশ দেন।

চেয়ারম্যান আফসার আলী বলেন, শুধু প্রেমের সম্পর্কের কারণে সম্মান বিসর্জন দিয়ে কোনো মেয়ে অন্যের বাড়িতে চলে আসতে পারে না। মেয়ের অভিযোগ তাকে ভিডিও দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। আমিও সেটা বিশ্বাস করি। ছেলের বাবাকে তার ছেলেকে হাজির করাতে বলা হয়েছে। মেয়ের পরিবারকে খবর পাঠানো হয়েছে। তারা আসলে বিয়ে দেওয়া হবে।

ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, বিষয়টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। শুনেছি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখানে বিট কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।

রাকিব হাসনাত/এসপি