কুষ্টিয়া পৌরসভার রাস্তা অবৈধভাবে দখল করে পাঁচতলা ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এলজিইডি খুলনা বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে। তিনি তার স্ত্রী ফাতেমা করিমের নামে জমি কিনে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই রাস্তার ওপর বাড়ি ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। 

কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুর এলাকার ১৩৯/১৯ গীর্জানাথ মজুমদার সড়কের মাঝামাঝি জায়গায় রাস্তার ওপর বাড়ি নির্মাণের ফলে ওই এলাকাসহ আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষের চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। শুধু তাই-ই না, অবৈধভাবে নির্মিত বাড়িটির জন্য রাস্তা পাকাকরণের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে স্থানীয় ৩১ জন বাসিন্দা স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র বরাবর। 

কুষ্টিয়া পৌরসভার রাস্তার জায়গা দখল করে সীমানা প্রাচীর ও নিয়মবহির্ভূত ইমারত নির্মাণের জন্য রেজাউল করিমের স্ত্রী ফাতেমা করিমকে দুইবার নোটিশ দেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র। নোটিশ পাওয়ার পরও সরকারি রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা সেই ভবন ও সীমানা প্রাচীর সরিয়ে নেওয়া হয়নি। যদিও দুই দফার নোটিশে সাত দিনের মধ্যে রাস্তার জায়গা ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পৌরসভার নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দখলকারী ওই বাড়ির মালিক অভিযোগকারীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পৌরসভার ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, এলজিইডি খুলনা বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিমের স্ত্রী ফাতেমা করিম পৌরসভার অর্ডিন্যান্স ২০০৯ সালের ৩৫ ও ৩৬ ধারা লঙ্ঘনের মাধ্যমে রাস্তার জায়গা দখল করে সীমানা প্রাচীর ও ইমারত নির্মাণ করেছেন। যা পৌর আইনের পরিপন্থী। 

২০২০ সালের ৮ অক্টোবর এবং ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর দখলকারীকে দুটি নোটিশ দেওয়া হয়। সাত দিনের মধ্যে রাস্তার ওপর থেকে অবৈধ অবকাঠামো সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন পৌর মেয়র। ওই নোটিশ পাওয়ার পরও অবকাঠামো সরিয়ে নেয়নি প্রকৌশলী  রেজাউল করিমের স্ত্রী ফাতেমা করিম। কিছুদিন আগেও দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে রাস্তার জায়গায় নির্মিত বাড়ি ও সীমানা প্রাচীর নিজ খরচে ভেঙে নিতে হবে। অন্যথায় নির্মাণকৃত সীমানা প্রাচীর ও ইমারতের বর্ধিত অংশ পৌরসভার লোকবল দ্বারা ভেঙে দেওয়া হইবে। ভাঙ্গার জন্য সমুদয় খরচ দখলকারীর নিকট হইতে আদায় করবে পৌরসভা।

অজ্ঞাত কারণে নোটিশ দেওয়ার দুই বছর পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বাড়ির মালিকও কারও নির্দেশ ও অনুরোধে কর্ণপাত করেননি। 

স্থানীয় ৩১ ব্যক্তি স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, এলজিইডি খুলনা বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম তার স্ত্রী ফাতেমা করিমের নামে জায়গা কিনে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেছে। বাড়িটিতে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাসরত। ওই বাড়ির পাশেই একই মালিক (ফাতেমা করিম) ৫ কাঠা জায়গা ক্রয় করে এবং সোয়া ৫ কাঠার বেশী জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেন। যাহা পৌর প্লান বহির্ভূত। পৌর ম্যাপে বেশি চিহ্নিত হলেও বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়িটি রাস্তার জায়গা দখল করেছে। যা প্লান ৫৫৭/১৮ বহির্ভূত। তারা বাড়িটি অপসারণ করে রাস্তাটি উন্মুক্ত করার দাবি জানান।

১৩৯/১৯ গীর্জানাথ মজুমদার সড়কের উত্তরের রেনউইক এবং দক্ষিণে এমআরএস পাম্প অবস্থিত। ওই সড়কের ড্রেন ও রাস্তা পাকাকরণের কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পের কাজ করছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ন্যাশন টেক কমিউনিকেশন। 

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অডিট অফিসার সোহেল পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কুষ্টিয়া পৌরসভার ২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার ড্রেন নির্মাণ ও রাস্তা পাকাকরণ প্রকল্পের কাজ চলছিল। গীর্জানাথ মজুমদার সড়কের সেই কাজ গত ২০ দিন আগে আমরা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ পৌরসভার রাস্তার জায়গায় ভবন ও সীমানা প্রাচীর পড়েছে। সেটি ভেঙ্গে বা রাস্তার জায়গা দখলমুক্ত করে না দিলে, আমারা কাজ শুরু করতে পারছি না। আমরা তো দখলকারীদের সঙ্গে লড়াই করব না।  পৌরসভাকে বিষয়টি জানিয়েছি, তারা এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।

তিনি আরও বলেন, কাজ বন্ধ থাকায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। গীর্জানাথ মজুমদার সড়কের দৈর্ঘ্য ৫৪০ মিটারের মধ্যে ২২০ মিটার ড্রেন ও রাস্তা পাকাকরণের কাজ বাকি আছে। রাস্তার জায়গা দখলমুক্ত করে দিলে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। 

স্থানীয় বাসিন্দা জিল্লুর রহমান বলেন, পৌরসভার রাস্তার মাঝখানে প্রকৌশলী রেজাউল করিম অবৈধভাবে বাড়ি ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। এতে এলাকার মানুষের চলাচল করতে সমস্যা হয়। রাস্তাটি দখলমুক্ত করার জন্য পৌরসভার মেয়র বরাবর আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পৌর কর্তৃপক্ষ রেজাউল করিমকে রাস্তার জায়গা ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও কর্ণপাত করেননি তিনি। দখলমুক্ত না হওয়ায় রাস্তার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই। 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রকৌশলী রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে রেজাউল করিমের ভাই তৌহিদুর ইসলাম বলেন, আমার ভাই রেজাউল করিমের বাড়ি নিয়মনীতি মেনে নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তার জায়গায় বাড়ি তৈরি করা হয়নি। সবার অভিযোগ মিথ্যা। 

কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, মেয়র মহোদয় প্যানেল মেয়র, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আমাকে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সে সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। রাস্তাটি এখনও দখলমুক্ত হয়নি। দখলমুক্ত করার জন্য বাড়ির মালিককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। রাস্তার জায়গা দখলমুক্ত হলে নির্মাণকাজ আবারও শুরু হবে।

রাজু আহমেদ/আরআই