ফানুসের আগুনে পুড়েছে কৃষকের পাঁচটি গরু। কৃষক পোড়া গরুগুলোকে বাধ্য হয়ে নামমাত্র মূল্যে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের সময় শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে মুন্সিগঞ্জ টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহী ইউনিয়নের চৈয়পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ওই গ্রামের ঋণগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষক জামাল খালাসী তার নিজস্ব গোয়ালঘরে ঋণ নিয়ে ১২টি গাভী লালন-পালন করে আসছিলেন। গাভীগুলোকে শীত থেকে রক্ষা করতে তিনি গোয়াল ঘরের চারদিকে পাটের তৈরি বস্তা দিয়ে বেড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার রাত ১২টার দিকে উড়ে আসা ফানুসের আগুনে গোয়াল ঘরে আগুন লেগে যায়।

দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়লে জামাল এলাকাবাসীর সহায়তায় সাতটি গরু উদ্ধার করতে সক্ষম হন। পাঁচটি গরু অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে ওই কৃষক চারটি গরু নামমাত্র মূল্যে কসাইদের কাছে বিক্রি করে দেন। অগ্নিদগ্ধ আরেকটি গরুকে গুরুতর অবস্থায় এখনও জামাল খালাসী লালন-পালন করছেন।

এ ব্যাপারে জামাল খালাসীর চাচা সাত্তার খালাসী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাতিজা জামাল তার বাড়িতে গোয়াল ঘর তৈরি করে ১২টি গরু লালন-পালন করে আসছিল। শীত আসায় গোয়াল ঘরের চারপাশে পাটের তৈরি বস্তা দিয়ে বেড়া দিয়েছিল। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে উড়ে-আসা ফানুস থেকে হঠাৎ গোয়াল ঘরে আগুন লেগে যায়। এ সময় গোয়াল ঘরে ১২টি গরু ছিল। আমরা সাতটি গরু বের করে নিতে পারলেও পাঁচটি গরু আগুনে পুড়ে যায়। তার মধ্যে চারটি গরুর নামমাত্র মূল্যে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। একটি গরু দগ্ধ অবস্থায় আমার ভাতিজা লালন পালন করছে। আগুনে পোড়া গরুটির যেকোনো সময় মৃত্যু হতে পারে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বইছে সমালোচনার ঝড়। অ্যাডভোকেট এইচ এম মাসুম নামের একজন ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের উন্মাদনা শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। উন্মাদনার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যা কোনো অবস্থায় কাম্য নয়। ফানুস নামের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতিকর বস্তু নিয়ে আগুনের গোলা খোলা আকাশে পাঠিয়ে দিয়ে অনেকে আনন্দিত হয়ে মনের তৃপ্তির আনন্দের ঢেউ তুললেও অনেকে ভুলে যান তার এ আনন্দ অন্যের কান্নার কারণ হয়ে যেতে পারে। আমি কৃষক জামাল খালাসীকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করার জন্য সরকার, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

জানতে চাইলে এইচ এম মাসুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি আমার গ্রামের। আমার গ্রামের লোকজন আমাকে ছবি তুলে ও ভিডিও করে পাঠিয়েছে। আমার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত জামাল খালাসীর‌ একাধিকবার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে গরুর খামারটি গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু মানুষের একটুখানি আনন্দের বলি হয়ে আজ সর্বস্বান্ত হতে হলো তাকে।

ব.ম শামীম/এসএসএইচ