কিশোরগঞ্জে হাইলি প্যাথজনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণে পোলট্রি শিল্পে ধস নেমেছে। দুশ্চিন্তায় ভুগছেন পোলট্রি শিল্পের উদ্যোক্তারা। বেকার হয়ে পড়ছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শত শত শ্রমিক। সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে রক্ষায় সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। 

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলাকে বলা হয় পোলট্রি ভিলেজ। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত জেলার হাজারো উদ্যোক্তা। এ শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে লাখ লাখ শ্রমিকের। গত বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে কিশোরগঞ্জে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার ব্যাপক সংক্রমণ ঘটে। জেলার শতাধিক ফার্মে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণে প্রায় পাঁচ লাখ মুরগি মারা গেছে।

শুধু জেলার বাজিতপুর ও কুলিয়ারচর উপজেলায় দুই লাখের বেশি মুরগি মারা গেছে। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় মৃত মুরগিগুলো পুড়িয়ে মাটিচাপা দিয়েছেন খামারিরা। একটি পোলট্রি খামারে ৬২ হাজারেরও বেশি লেয়ার মুরগি মারা গেছে। এতে ৪ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছেন খামারের শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন আগেও উৎপাদনের চাপে কর্মমুখর ছিল বাজিতপুর উপজেলার কামালপুরের স্বপ্ন অ্যাগ্রো ফার্ম ফ্যাক্টরির লেয়ার মুরগির ফার্ম এবং কুলিয়ারচর ডুমরাকান্দার কবির হোসেনের খামার। এ আদর্শ ফার্ম দুটি ছিল শতভাগ বায়ু সিকিউরিটি সম্পন্ন। হঠাৎ স্বপ্ন অ্যাগ্রো ফার্মের ১১টি এবং কবির হোসেনের ফার্মের ৭টি লেয়ার সেটে ভয়াবহ আকারে হাইলি প্যাথজনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ ঘটে। 

খামারিরা জানান, প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রতিষেধক ব্যবহার করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে। তাতেও মুরগির মড়ক ঠেকানো যায়নি। এসব মুরগির ময়নাতদন্ত করে হাইলি প্যাথজনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। 

এ ঘটনায় ডিম দেওয়া শুরু করার সময় স্বপ্ন অ্যাগ্রো ফার্মে ৯ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ২০ ও ২৩ সপ্তাহ বয়সী ৬২ হাজার ৬২৬টি এবং কবির হোসেনের ফার্মের ৩৫ হাজার লেয়ার মুরগি মারা যায়। এতে স্বপ্ন অ্যাগ্রো ফার্মের ৪ কোটি ৮ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা এবং কবির হোসেনের ফার্মের দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় দিশেহারা ফার্ম মালিকরা।

বাজিতপুর উপজেলার কামালপুরের স্বপ্ন অ্যাগ্রো ফার্মের পরিচালক ইব্রাহিম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব ঘটার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে ভ্যাকসিন দিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে এটা সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়েছে। মারা গেছে বিপুল পরিমাণ লেয়ার মুরগি। এমন ভয়াবহ মড়কে খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছেন এ খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা শত শত নারী-পুরুষ।

কুলিয়ারচর উপজেলার ডুমরাকান্দার খামার মালিক কবির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিম দেওয়া মুরগিগুলো মারা যাওয়ার পর থেকে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। সরকার ও ব্যাংকগুলো যদি পাশে না দাঁড়ায় তাহলে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসতে হবে।

মৃত মুরগির ময়নাতদন্তকারী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে আসার পর আমি মুরগি দেখে চিকিৎসা দিয়েছি। তারপরও সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি। পরে আমি মৃত মুরগির ময়নাতদন্ত করে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আলামত পেয়েছি।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা হলো পোলট্রি জোন। আবার হাওর এলাকা। শীত মৌসুমে এখানে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। আর অতিথি পাখি এ রোগটি বহন করে। শীত মৌসুমে আমাদের দেশে আসা অতিথি পাখিরা এসব পোলট্রি ফার্মের আশপাশের ঝোপঝাড় ও গাছগাছালিতে আশ্রয় নেয়। এসব পাখির বিষ্ঠা থেকে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে থাকে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটার খবর পাওয়া গেছে। তাই জেলার সব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ রোগের প্রাদুর্ভাবে মুরগি মারা যাওয়ার পর আতঙ্কিত খামারিদের বেশিরভাগ লোক জানাজানি না করে রাতারাতি এগুলো পুড়িয়ে গোপনে মাটিচাপা দেন।  প্রতিষেধক দিয়েও অনেক সময় এই সংক্রমণ থামানো সম্ভব হয় না। তাই খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়েন।

আরএআর