ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে চার ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ৬ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৮ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বসতঘর।

বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বালিয়া ও ভাবুকদিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ শর্টগানের গুলি, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে সংঘর্ষের সময় উভয় গ্রামের শত শত লোকের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে একটি মাঠের কৃষকের অন্তত ৩৫ বিঘা জমির পেঁয়াজের চারা নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গট্টি ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে এক পক্ষকে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ সমর্থক হিরু মোল্লা এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন একই গ্রামের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ সমর্থক সরোয়ার মাতুব্বর। বেশ কয়েক দিন ধরে এই দুই পক্ষের আধিপত্য নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এর জেরে বালিয়া গ্রামের মাতব্বরা কয়েক দফা গোপন বৈঠক করে নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত করে সংগঠিত হয়ে আজ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বুধবার সকাল ৭টার দিকে বালিয়া গ্রামের হিরু মোল্লাকে পাশের ভাবুকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা গট্টি গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফজলুর মতিন বাদশা মিয়ার সমর্থকরা সমর্থন দিয়ে জড়ো হতে থাকেন। এ খবরে সারোয়ার মাতুব্বরের সমর্থকরাও সংঘবদ্ধ হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় উভয় পক্ষকে দেশীয় অস্ত্র বহন করতে দেখা যায়।

পরে চার ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ১৩টি বসতঘর। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে পুলিশের সদস্যসহ অন্তত ২৮ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে সংঘর্ষের সময় বালিয়া ও ভাবুকদিয়া গ্রামের মাঝে থাকা একটি ফসলি মাঠের সবেমাত্র রোপণ করা অন্তত ৩৫ বিঘা জমির পেঁয়াজের চারা নষ্ট হয়ে গেছে সংঘর্ষকারীদের পায়ের চাপায় পিষ্ট হয়ে। এতে স্থানীয় কয়েকজন নিরীহ কৃষকেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়ে বলে তারা জানিয়েছেন।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগানের ৩০টি গুলি, ১৪টি কাঁদানে গ্যাস ও ৬টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। তিনি বলেন, সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে তিনজন উপপরিদর্শকসহ (এসআই) পুলিশের ছয় সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আর সংঘর্ষের ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। পরিবেশ শান্ত রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।

জহির হোসেন/এনএ