ঘন কুয়াশার কারণে শীতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে নৌপথ। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে। কুয়াশার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না লঞ্চগুলো। কুয়াশার মধ্যে কার্যকর হয় এমন আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই কোনো লঞ্চে। সব লঞ্চই ঝুঁকি নিয়ে ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মাস্টার ও যাত্রীরা দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন।

তবে লঞ্চের মাস্টাররা মনে করছেন, শীতের রাতে নদীপথে চলাচলে বড় বাধা যত্রতত্র বাল্কহেড চলাচল। এটি বন্ধ করা গেলে লঞ্চ চলাচলে ঝুঁকি কমবে। বিশেষ করে রাতের বেলায় বাল্কহেড বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না যাত্রীরা। কুয়াশায় মাঝনদীতে লঞ্চ আটকে থাকা এবং ধীরগতিতে চলাচল করার কারণে ২-৩ ঘণ্টা পর গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে লঞ্চগুলোকে। যে কারণে যাত্রীদের বিড়াম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চাঁদপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর ও এর আশপাশে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই প্রচুর কুয়াশা পড়ছে। ঘন কুয়াশার কারণে দূরের কিছু দেখা যাচ্ছে না। কখনো কখনো সূর্যের আলোও কুয়াশা ভেদ করতে পারছে না। আর এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রীবাহী নৌযান।

কুয়াশার কারণে কিছুদিন ধরে চাঁদপুর-ঢাকা পথে নৌযান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ থেকে ঘন কুয়াশায় লঞ্চ চলাচলে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি পথে কুয়াশা হলে নৌযান থামিয়ে বাজাতে হবে হুইসেল। ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া মাঝ নদীতে যাত্রী ওঠানামায়ও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

সূত্র জানায়, চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে চলাচল করছে শতাধিক লঞ্চ। ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে নৌযানগুলো চলাচলে ত্রুটি দেখা দেয়। অনেক সময় চাঁদপুরের বিভিন্ন চরে আটকা পড়ে নৌযান। লঞ্চ, বাল্কহেড, কার্গোসহ বিভিন্ন নৌযান একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটছে। কুয়াশার কারণে ঢাকা-চাঁদপুরের মধ্যে চলাচলকারী লঞ্চগুলো ২-৩ ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। নদীর মাঝে আটকে পড়লে শীতে শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের শত-শত যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ও রফ রফ-২ লঞ্চের মাস্টার হারুনুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীতে ঘন কুয়াশা থাকলে ধীরগতিতে লঞ্চ চালাতে হয়। অনেক লঞ্চেই আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। লঞ্চগুলোতে রাডার এবং নদীতে পানি কম আছে কি না তার জন্য ইকো সাউন্ডার মেশিন থাকা জরুরি। তাহলে ঘন কুয়াশায়ও লঞ্চ চলাচল করা যায়।

আমরা যতটুকু সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করি। তারপরও আমরা যতই সতর্কতা অবলম্বন করি না কেন, নদীপথে বেপরোয়া বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করতে হবে। রাতের বেলা পিপীলিকার মতো বাল্কহেড চলছে। তাদের কারণে নদীপথে ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমরা সতর্ক থাকি কিন্তু তাদের কারণে নিরাপদে লঞ্চ চলাচল করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, নদীপথে যত্রতত্রভাবে বাল্কহেড চালানোর কারণে আমাদের কষ্ট হয়। সরকার ঈদের সময় যেভাবে নদীতে বাল্কহেড বন্ধ রাখে, ঠিক শীতের সময় কুয়াশার মধ্যে বাল্কহেড বন্ধ রাখলে আমরা উপকৃত হতাম। প্রতিবছর বাল্কহেডের কারণে নৌযান চালাতে সমস্যা হয়। আর সরকারও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবেও পদক্ষেপ গ্রহণ করছি, যাতে নৌপথ নিরাপদ রাখা যায়।

লঞ্চঘাটে ঢাকাগামী যাত্রী রোজা ইসলাম, সাথী আক্তার ও মোরশেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক সময় চিকিৎসা, পরীক্ষা, কিংবা অফিসের কাজে ঢাকায় দ্রুত যেতে হয়। কিন্তু শীতের সময় ঘন কুয়াশার কারণে আমাদের যেতে বিলম্ব হচ্ছে। লঞ্চগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায়, মাঝপথেই লঞ্চ বন্ধ রাখে কিংবা ধীরগতিতে লঞ্চ চলাচল করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীতেই কাটিয়ে দিতে হয়। 

এমভি শাহআলী প্লাস-১ লঞ্চের ইঞ্জিন ড্রাইভার মহিরুল ইমলাম বলেন, চাঁদপুরের সব লঞ্চে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। বিশেষ করে ছোট লঞ্চে নেই। কুয়াশার কারণে ছোট লঞ্চগুলোর বেশি সমস্যা হয়। মাঝ নদীতে থেমে থাকে, না হয় চরে আটকা পড়ে।

লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি রহুল আমিন হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বছরের এই সময়ে কুয়াশার কারণে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন হয়। লঞ্চগুলোতে কুয়াশা ভেদ করার মতো কোনো আধুনিক যন্ত্র নেই। তবে ডান-বাম এবং নদীর গভীরতা দেখার মেশিন রয়েছে। কুয়াশার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে যেতে পারছে না লঞ্চ। এতে  ঢাকা থেকে চাঁদপুর আসতে এবং চাঁদপুর থেকে ঢাকা যেতে ২-১ ঘণ্টা দেরি হচ্ছে। এছাড়া সরকারিভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কুয়াশা থাকলে মাঝ নদীতেই লঞ্চ বন্ধ রাখতে হবে।

চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা (উপপরিচালক) কায়সারুল ইসলাম অবশ্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘন কুয়াশায় চাঁদপুরের লঞ্চে কোনো সমস্যার কথা শুনিনি। তবে বেশির ভাগ বাল্কহেডগুলো নিয়ম না মেনে রাতে চলাচল করছে। বাল্কহেডের কারণে রাতের বেলা নৌযান চলাচলে বিগ্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমএসআর/জেএস