নিজের গরু বিক্রি করে কারাগারে যাওয়া সেই গোলাম হোসেন জামিন পেয়েছেন। সোমবার দুপুরে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় গরু দুটি তার জিম্মায় দিয়ে জামিন মঞ্জুর করেন ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস রমেশ কুমার ডাগা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবাদীর আইনজীবী ইমরান চৌধুরী বলেন, আদালতের কাছে মালিকানা-সংক্রান্ত দরখাস্ত করলে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে গরুগুলোকে আসামি গোলাম হোসেনের জিম্মায় দেন। যত দিন না মামলার তদন্ত শেষ হচ্ছে, গরুগুলো গোলাম হোসেনের কাছে থাকবে।

এর আগে গত ৩ জানুয়ারি গরু চুরির অপরাধে গোলাম হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন আদালতে সোপর্দ করলে গরুর প্রকৃত মালিক বের করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে আদেশ দেন আদালত। ৯ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে গোলাম হোসেনসহ পাঁচজনকে কারাগারে পাঠান আদালত।

পরে রোববার (৯ জানুয়ারি) তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ। প্রতিবেদনে বিবাদী গোলাম হোসেন গরুর প্রকৃত মালিক নন, মামলার বাদী আতাবুর রহমানই গরুর প্রকৃত মালিক উল্লেখ করে আসামিদের রিমান্ড আবেদন করেন তিনি।

কিন্তু আতাবুর রহমান আটক গরু দুটি তার গরুর মতো দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তার নয় বলে আদালতে জবানবন্দি দেন। তখন আদালত সোমবার এফিডেভিটের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় গরুগুলো গোলাম হোসেনের জিম্মায় দিয়ে তার জামিন মঞ্জুর করার আদেশ দেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ বলেন, বাদীর মামলায় আমরা আসামিদের আদালতে সোপর্দ করি। আদালত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাচাই-বাছাই করে গরুর প্রকৃত মালিক চিহ্নিত করার নির্দেশনা দেন। আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। অন্যদিকে বাদী ও বিবাদীর মধ্যে মীমাংসা হলে বাদী গরুর মালিকানা দাবি না করলে এফিডেভিটের মাধ্যমে আদালত গোলাম হোসেনকে জামিন দেন এবং গরুগুলো তার জিম্মায় দেন।

ঠাকুরগাঁও আদালত পরিদর্শক আবু ওয়াহেদ বলেন, বাদী ও বিবাদী মীমাংসা করলে আদালত এফিডেভিটের মাধ্যমে গরু দুটি বিবাদী গোলাম হোসেনের জিম্মায় দেন এবং বাকি আসামিদের জামিন দেন।

জামিন পাওয়ার পর গোলাম হোসেন বলেন, জীবনে কখনো অন্যায় করিনি। তারপরও জেল খাটতে হলো। তবে মনকে অনেক শক্ত রেখেছিলাম। শেষ বয়সে এসে নিজের গরু বিক্রি করার অপরাধে জেলে থাকব, কল্পনা করিনি। তবে সৎ মানুষের জয় হবে। যারা আমার জন্য কষ্ট করেছেন, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার জন্য দোয়া করবেন আপনারা।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (২ জানুয়ারি) সদর উপজেলার শুকানপুকুরী ইউনিয়নের তেওয়ারীগাঁও গ্রামের গোলাম হোসেন তার লালিত দুটি গরু ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা দাম ধরে ৪ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে বিক্রি করেন। বাকি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা গরু বিক্রি করে দেওয়ার শর্তে গরুগুলো স্থানীয় হাসেম আলীসহ চার গরু ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেন।

পরদিন সোমবার ব্যবসায়ীরা বীরগঞ্জ উপজেলাধীন মরিচা ইউনিয়নের গোলাপগঞ্জ বাজারে দুটি গরু বিক্রি করার জন্য নিয়ে যান। এ সময় বাদী আতাবুর ও স্থানীয়রা তাদের গরুচোর হিসেবে চিহ্নিত করে আটক করেন। সেখানে ছুটে যান গরুর মালিক গোলাম হোসেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে গোলাম হোসেনসহ ব্যবসায়ীদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

এ নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে ‘নিজের গরু বিক্রি করে মালিক বনে গেলেন চোর’ একটি সচিত্র নিউজ ও ভিডিও (https://www.facebook.com/100523345143327/videos/294234155861620) প্রকাশিত হয়। এতে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এনএ