পৌষের শেষ দিন শুক্রবার স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইলে মাছের মেলায় হাজারো মানুষের ঢল লক্ষ করা গেলেও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিক জামান জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। এ ব্যাপারে তার কোনো অনুমতিও ছিল না।

সরকার করোনা মহামারির পর ওমিক্রনের ক্রমবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা স্বাস্থ্যবিধি জারি করলেও শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বিনিরাইলে ওই মেলা চলছে।

অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই কোনো স্বাস্থ্য সচেতনতা নেই, নেই কোনো মাস্কেরও ব্যবহার। মাছের মেলাকে ঘিরে সেখানে বস্ত্র, হস্ত, চারু-কারু, প্রসাধনী, ফার্নিচার, খেলনা, তৈজসপত্র, মিষ্টি ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যের দোকান বসে। ওই এলাকায় মানুষ যেন উৎসবে মেতে ওঠেছেন। দোকানে মাছের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন মাছ বিক্রেতারা।

মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট-বড় সাইজের মাছ নিয়ে এসছেন ব্যবসায়ীরা। সামুদ্রিক চিতল, বাগাড়, বোয়াল, কালবাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানারকমের দেশি মাছ। প্রতিবছর পৌষের শেষ দিনে কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইলে বসে মাছের মেলা। এ মেলা থেকে সাধ্য অনুযায়ী মাছ কিনে জামাইরা শ্বশুরবাড়িতে যান।

এবার মেলায় বড় বড় (৩০/৪০ কেজি ওজনের) মাছের দোকানে ক্রেতাদের বেশি ভিড় দেখা গেছে। এদিনের মেলায় ৪০ কেজির এক সবচে বড় বাগাড়ের দাম ৪৫ হাজার টাকা উঠলেও বিক্রেতা মাছটির দাম চেয়েছেন ৬৫ হাজার টাকা।

আয়োজকরা জানান, মেলায় গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। মাছের সঙ্গে মেলায় আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি, বস্ত্র, হস্ত ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যের হাট বসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আয়োজক মেলায় স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, আমরা বারবার ক্রেতা-বিক্রেতাকে মাইকিং ও প্রচারণা করেও তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। কেউ কারো কথা শুনেন না।

মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ও জামালপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য কিশোর আকন্দ জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর পৌষের শেষ দিনে এ মেলা বসে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। এ মেলাকে কেন্দ্র করে বস্ত্র, হস্ত, চারু-কারু, প্রসাধনী, ফার্নিচার, খেলনা, তৈজসপত্র, মিষ্টি ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যের দোকান বসে।

তবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ এবং মাইকিং করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ মেলায় অংশ নেয়ার অনুরোধ করলেও শেষ পর্যন্ত তা ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে পুলিশ আমাদের নিষেধ করলেও এক বছর আগেই ঘোষিত এ মেলা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কয়েকদিন আগেই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এলাকায় পৌঁছে গেছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিক জামান জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। এ ব্যাপারে তার কোনো পারমিশনও ছিল না। তবে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কীভাবে কারা এভাবে মেলার আয়োজন করেছেন।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান বলেন, মানুষের মধ্যে মহামারির কোনো ভয় নেই। মাস্ক পরার ব্যাপারে সতর্ক করা হলেও মানুষ তা মানছে না। তারা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আমরা কী করব?

শিহাব খান/এমএসআর