প্রধানমন্ত্রীর আমৃত্যু সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক প্রভাবশালী আমলা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য হোসেন তৌফিক ইমামের (এইচ টি ইমাম) ৮৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। দিনটিতে উল্লাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে এ কর্মবীরকে।

শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল থেকেই দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল, ছিন্নমূলদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ।

উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জল ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর আমৃত্যু রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম মিলাদ মাহফিল ও শীতবস্ত্র বিতরণ। শনিবার বাদ জোহর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া উপজেলা যুবলীগের উদ্যোগে পাঁচ শতাধিক ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

সাবেক এ ভিপি আরও জানান, যার জন্মে আলোকিত হয়েছিল উল্লাপাড়া, সেই কৃতিসন্তানকে জন্মদিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে উল্লাপাড়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ ও সর্বস্তরের মানুষ।

এইচ টি ইমামের জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরে। বাবা তাফসির উদ্দীন আহমেদ ও মা তাহসিন খাতুন। বাবার চাকরি সূত্রে শৈশবে রাজশাহীতে অবস্থানের কারণে সেখানেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তিনি। পরে লেখাপড়া করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া ও কলকাতায়। ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন ঢাকা কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে। এরপর ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। এখান থেকেই ১৯৫৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। সেখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৫৬ সালে। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করার পর রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তিনি পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬১ ব্যাচের সিএসপিদের মধ্যে তিনি ৪র্থ স্থান লাভ করেন এবং পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পদে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে ‘উন্নয়ন প্রশাসনে’ পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন।

পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে সদস্য হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেন। শুরুতে তিনি রাজশাহী কালেক্টরেটে ১৯৬২-১৯৬৩ মেয়াদে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি পদোন্নতি লাভ করেন এবং ১৯৬৩-১৯৬৪ মেয়াদে নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক বা এসডিও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি নারায়ণগঞ্জ মহকুমার এসডিও হিসেবে বদলি হন এবং প্রায় এক বছর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ এর মার্চ মাসে তিনি রাঙামাটি জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সরকারের ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারে লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া যমুনা মাল্টিপারপাস ব্রিজ অথরিটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্যাবিনেটে মন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। তিনি ২০০৯ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী ছিলেন এইচ টি ইমাম।

গত বছরের ৩ মার্চ রাজধানীর সিএমএইচ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এ রাজনীতিবিদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

শুভ কুমার ঘোষ/এসএসএইচ