গাজীপুরের শ্রীপুরে ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে নিহতের পরিবার। শনিবার (১৫ জানুয়ারি) শ্রীপুর থানায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা নয়নের বড় ভাই মো. রতন মিয়া এ মামলা করেন।

মামলায় প্রধান আসামি কাওরাইদ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী খাইরুল ইসলাম মীর ও সাত নং আসামি অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার, কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলামের ভাই আব্দুল কাদিরসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

নিহত ছাত্রলীগ নেতা নয়নের বড় ভাই মানিক জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কাওরাইদ কেএন উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা খাইরুলের ছেলে অনুভবের (২০) সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা নয়নের অনুসারীদের ঝগড়া হয়। পরে নয়নের অনুসারীরা অনুভবের বিরুদ্ধে নয়নের কাছে অভিযোগ জানায়। নয়ন উভয় পক্ষকে ডেকে অনুভবকে একটা থাপ্পড় দিয়ে মীমাংসা করে।

থাপ্পড় দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে যুবলীগ নেতা খাইরুল মীর নয়নকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে ডেকে পাঠান। সেখানে আগে থেকেই খাইরুল মীরের নেতৃত্বে ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নয়নকে আটকে রাখার খবর পেয়ে মানিক আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে নয়নকে না পেয়ে খুঁজতে থাকেন। কিছু সময় পর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পেছনে পুকুর থেকে নয়নের মরদেহ উদ্ধার করেন তারা।

তিনি আরও জানান, নয়ন মাদকবিরোধী বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা করতেন। চার মাস আগে নয়নের সঙ্গে খাইরুলের অনুসারী মাদক ব্যবসায়ী বাচ্চুর সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে। হত্যা করতে বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা করেছিল বলে নয়ন জানিয়েছিল। ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছিল নয়ন।

অন্যদিকে, খাইরুল মীরও ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে অন্য একজনকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল। নয়ন তাদের প্রার্থীর তুলনায় বেশ জনপ্রিয় ছিল। তবে ওই প্রার্থীর নাম জানাতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খাইরুল মীরের সঙ্গে নয়নের বিরোধ ছিল। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার তারা নয়নকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে বলে তিনি জানান।

নয়নকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আটকে মারধরের সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পায়ে ধরে নয়নকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আকুতি-মিনতি করেছিলেন বলে জানান নয়নের মা ও বড় ভাই মানিক। কিন্তু মা-ভাইয়ের এমন করুণ আকুতি উপস্থিত নেতাদের মন গলাতে পারেনি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় ভাই রতন মিয়া বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

শিহাব খান/এনএ