উপকূলীয় জেলা ভোলায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। কয়েক দিন থেকে বয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ভারী কুয়াশায় জনজীবন বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে পুরো জেলায়। শীতের তীব্রতা বাড়ার কারণে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সী রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হতে হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়া শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এছাড়াও বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এমন বৈরী আবহাওয়ায় প্রতিদিন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। শিশু ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা ২৪টি থাকলেও প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকছে ৫০-৭০ জন।

ফলে এক বেডে ২ থেকে ৩ জন করে রাখতে হচ্ছে রোগী। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি শিশু ওয়ার্ড অপরিষ্কার থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে রোগীর স্বজনরা। 

শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ভোলা সদর হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৩৭ শিশু রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। যার মধ্যে বেশির ভাগই নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু। শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহে ভোলা হাসপাতালে ৩ শতাধিক শিশু ভর্তি হয়েছে।

এরমধ্যে অধিকাংশ শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত। যার মধ্যে নিউমোনিয়ায় ৭ জানুয়ারি বোরহানউদ্দিন উপজেলার শিশু ও ১৩ জানুয়ারি ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের এক শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে শিশুদের রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ হাসপাতালে এসে ঠিকমতো চিকিৎসা ও ওষুধ পাচ্ছে না তারা। পাশাপাশি শয্যাসংকটের কারণে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে মেঝেতে। হাসপাতালে নোংরা পরিবেশের সঙ্গে ঠিকমতো ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না তারা।

এমনি এক রোগীর স্বজন মো. মিলন অভিযোগ করে বলেন, ১১ জানুয়ারি একমাত্র ছেলেসন্তানের নিউমোনিয়ার কারণে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছি। সকালেও ভর্তি বেড খালি না থাকায় স্থান মিলে বাইরের মেঝেতে। গতকাল বেড খালি হলে শিশু ওয়ার্ডের মধ্যে স্থান মিলে তার। শুধু বেড নয় শিশু ওয়ার্ডে প্রায় ১০০ রোগীর জন্য তিনটি নেবুলাইজারের জায়গায় একটি মাত্র নেবুলাইজার রয়েছে, তাও ভাঙা। এতে করে বাচ্চাদের নেবুলাইজারের সেবা নিতে অনেক কষ্ট হয়ে পড়ছে।

মোশাররফ হোসেন নামের এক স্বজন বলেন, আমার বাচ্চার ঠান্ডাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বেড খালি না থাকায় অন্য একজনের বেডে থাকতে হচ্ছে। ভোলা হাসপাতালের পরিবেশ এতোটাই নোংরা যে ডাস্টবিনেই চাইতেও খারাপ। যেকোনো সুস্থ মানুষ হাসপাতালে ঢুকলে এমনিতেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর অন্য ওয়ার্ডের তুলনায় শিশু ওয়ার্ডটা অন্তত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত থাকার কথা কিন্তু শিশু ওয়ার্ড এতোটাই খারাপ অবস্থা যে ঢুকলেই বমি আসে! তাই সারাক্ষণ বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াতে হয়।

শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স (ইনচার্জ) মৌসুমি রায় জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে রোগী বেড়েছে। প্রতিদিনই ছাড়পত্রের তুলনায় নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে হাসপাতালে জনবল কম থাকায় ঠিকমতো চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

অভিভাবকদের শীতের সময়ে নবজাতকের বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে ভোলা সদর হাসপাতাল সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. সালাউদ্দিন জানান, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে শিশুদের শীতজনিত রোগের প্রকোপ একটু বৃদ্ধি পায়। এই সময় বাচ্চাদের নিউমোনিয়া থেকে বাঁচাতে হলে গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে তাতে করে শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ভোলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নিরুপম সরকার জানান, শিশু রোগীদের পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার ও শিশুবিশেষজ্ঞ রয়েছে। তবে প্রতিদিনের রোগীর তুলনায় শিশু ওয়ার্ডে শয্যাসংকট রয়েছে। শিশু ওয়ার্ড অপরিষ্কারের বিষয়টি মূলত একই স্থানে ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ রোগী অবস্থান করায় এমনটা হয়েছে।

ইমতিয়াজুর রহমান/এমএসআর