মাদারীপুর শহরের ২ নং শকুনি রোড এলাকা থেকে অপহৃত ইতালিপ্রবাসী কিশোরী নোভা স্বেচ্ছায় পালিয়েছিল বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ওই কিশোরীর স্বীকারোক্তিমূলক একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। 

এদিকে অপহরণ মামলার প্রধান আসামি আফজাল হোসেন শাওনের পরিবারের দাবি, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে মাদারীপুর শহরের কলেজগেট এলাকার একটি বাসা থেকে অপহৃত সেই ইতালিপ্রবাসী কিশোরী নোভাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। উদ্ধারের দুই দিন পর আদালতের মাধ্যমে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগেই ওই কিশোরীর একটি স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসীসহ সাধারণ মানুষ।

ভিডিওতে ওই কিশোরী বলছে, ‘আব্বু-আম্মু তোমরা আমাকে খুঁইজো না। আমি নিজের ইচ্ছায় শাওনের সঙ্গে এখানে আসছি। এখানে শাওন ও তার পরিবারের কারও কোনো দোষ নেই। তাদের (শাওনের পরিবার) ওপর চাপ দেওয়া তোমরা বন্ধ করে দাও। আমি শাওনকে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছি। আমাকে বাসা থেকে বের করতে তোমরাই বাধ্য করেছো। আমি তোমাদের অনেক বুঝিয়েছি, যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছো, তাকে আমি বিয়ে করব না। তাছাড়া আমরা এখন কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করে ফেলছি। আমরা ভালো আছি। তোমরা শাওনের পরিবারকে হয়রানি করা ছেড়ে দাও।’

এর আগে নোভার বাবা রিপন চোখদার ১০ জানুয়ারি সকালে মাদারীপুর শহরের শকুনি এলাকার ফুফুর বাড়ির সামনের সড়ক থেকে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে নোভাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং চার দিন পরে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ।

তবে এলাকাবাসীসহ শাওনের পরিবারের দাবি, বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রেমঘটিত। শাওনের সঙ্গে নোভার অনেক দিন ধরে প্রমের সম্পর্ক। পরিবারের লোকজন অন্য আরেকটি ছেলেকে বিয়ে করতে চাপ দিলে বাধ্য হয়ে শাওনের সঙ্গে পলিয়ে যায় নোভা। শাওনের পরিবারকে হয়রানি ও সমাজের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করতে মিথ্যা অপহরণ মামলা করা হয়েছে।

শাওনের মা বলেন, ছেলে-মেয়েরা প্রেম করলে তো বাবা-মাকে জানিয়ে করে না। তারা মেয়েকে অন্য আরেকটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলে তারা পালিয়ে যায়। নোভা বিষয়টি স্বীকার করেছে। কিন্তু তারা এখনো আমাদের নামে মিথ্যা অপহরণ মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, অপহরণের অভিযোগ দিয়ে ওই মেয়ের পরিবার বলে, আমাদের মেয়ে ইতালি থেকে এসেছে। সে ঠিকমতো বাংলা বলতে পারে না। বাংলাদেশি টাকাও চেনে না। তাকে ভুল বুঝিয়ে অপহরণ করেছে আফজাল হোসেন শাওন। কিন্তু মেয়েটি যখন ভিডিওতে কথা বলেছে তখন দেখলাম, সে খুব সুন্দরভাবে বাংলাতে কথা বলছে। বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রেমঘটিত একটি বিষয় এবং মামলাটি সাজানো।

ওই কিশোরীর চাচা নয়ন বলেন, নোভা যখন অপহৃত হয়েছে তখন তারা নিজেরা বাঁচতে তাকে জোরপূর্বক এমন বক্তব্য দিতে বাধ্য করেছে। নোভা তো অবুঝ মেয়ে, তাকে বলেছে তুমি যদি এমন বক্তব্য দাও তাহলে বাবা-মায়ের কাছে তোমাকে ফিরিয়ে দেব। আমাদের মেয়ে উদ্ধার হলেও আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) ছালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা কিশোরীকে উদ্ধার করেছি। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। ওই কিশোরীর দেওয়া স্টেটমেন্ট আমারা সেভাবে পাইনি। তাছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন কিশোরীর এমন স্টেটমেন্ট কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা সার্বিকভাবে আমরা তদন্ত করছি।

নাজমুল মোড়ল/এসপি