এমভি সুরভী-৯ লঞ্চে যাত্রী ও সাংবাদিকদের মারধরে অভিযুক্ত ম্যানেজার মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার না করায় বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কে বরিশাল ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো। সংগঠনের সভাপতি ফিরদাউস সোহাগের সভাপতিত্বে মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের ব্যুরো প্রধান রাহাত খান।

মানববন্ধনে বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, আদালত রোটেশন প্রথা বাতিল করার পরও লঞ্চ মালিকরা তোয়াক্কা করছেন না। লঞ্চ মালিকরা যাত্রীদের হেনস্থা করতে ছাড়েন না। সাংবাদিকদের দায়িত্ব আইনকে সহায়তা করা। সুরভী-৯ লঞ্চে ৯ জানুয়ারি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাদেরও মারধর করেন লঞ্চের স্টাফরা। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে ম্যানেজার মিজান অপরাধী। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ এবং সাংবাদিকদের করা পৃথক লিখিত অভিযোগ উপেক্ষা করে অভিযুক্ত মিজানকে আজ পর্যন্ত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়নি।

তিনি বলেন, এই মানববন্ধন থেকে দাবি করছি সাংবাদিক ও যাত্রীদের যিনি মারধর করেছেন তাকে গ্রেফতার করা হোক। পাশাপাশি কোতোয়ালি থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিমকে প্রত্যাহার করা হোক। তিনি আইন প্রয়োগ না করে অভিযুক্তের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলে মনে করি।

বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, ঘটনার পর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অনুনয়-বিনয় করে বলেছি আপনি হামলাকারীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। কিন্তু তিনি তা করেননি, এমনকি আমাদের কথার কোনো মূল্যায়নও করেননি।  ওসি আজিমুল করিমের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত। কোতোয়ালি থানায় অনেক ওসি আমরা দেখেছি, কিন্তু আজিমুল করিমের মত এত অদক্ষ কাউকে ওসি হিসেবে আমরা পাইনি। 
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আজ আরও একটি মামলা করব ওই ঘটনায়। এর আগে ওসি জানিয়েছেন- মামলার পরে হামলাকারী জামিন নিয়েছেন। আমি ওসিকে বলেছি, জামিন আপনার সহায়তায় নিয়েছে। আমরা দেখেছি আপনি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসামি ধরে আনতে পারেন অথচ বরিশাল শহরের আসামি আপনি গ্রেফতার করতে পারেন না। এজন্য আমরা আরও একটি মামলা করব।  

সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন বলেন, যাত্রী ও সাংবাদিকদের মারধরকারীকে আইনের আওতায় না এনে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইনের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছেন। আমরা চাই অনতিবিলম্বে হামলাকারী মিজানকে গ্রেফতার করা হোক। পাশাপাশি ওসি আজিমুর করিমকে প্রত্যাহার করা হোক।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান মুরাদ আহমেদ, বরিশাল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি কাজী আর মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম জহির, নিউজ এডিটরস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি রাতে বরিশালগামী এমভি সুরভী-৯ লঞ্চে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করায় ৯ মার্চ বরিশাল নদী বন্দরে যাত্রীদের মারধর করেন লঞ্চের ম্যানেজার মিজানুর রহমান ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাপার্সনকে মারধর করেন লঞ্চের স্টাফরা। এ ঘটনায় লঞ্চের ম্যানেজারকে সাময়িক বরখাস্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করেন। 

অন্যদিকে মারধরের ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এবং ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন মিদুল ইসলাম মোহন বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার পরও কোতোয়ালি থানার ওসি কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর