অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম

সিলেট সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নজরুল ইসলাম জালিয়াতি করে পৌনে ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অফিসের বিভিন্ন নথিপত্র তার হাতে থাকার সুবাদে তিনি ভুয়া বিল ও ভাউচার বানিয়ে এসব টাকা তুলে নিয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তদন্তে নেমে এর সত্যতাও পেয়েছেন। এরপর থেকেই উধাও হয়েছেন নজরুল ইসলাম। 

দুদক সূত্রে জানা যায়, নজরুল বিভিন্ন সময় জালিয়াতির মাধ্যমে পৌনে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রাথমিকভাবে এই টাকা আত্মসাতের প্রমাণও মিলেছে। প্রমাণ পাওয়ার পর গত ২৭ জানুয়ারি সিলেটের শাহপরাণ থানায় দুদকের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। 

নজরুল ইসলাম সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দক্ষিণ বাগেরখাল গ্রামের মো. আব্দুল মুছব্বিরের ছেলে। তিনি সিলেট সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে অফিসে সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 

দুদক জানিয়েছে, নজরুল ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে আয়/ব্যয় কর্মকর্তাদের দিয়ে স্বাক্ষর করাতেন। পরে হিসাবরক্ষণ অফিসে জমা দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা চেকে ইচ্ছেমতো টাকার পরিমাণ বসিয়ে টাকা তুলে নিতেন। 

দুদকের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭টি চেকের মাধ্যমে ৮৭ লাখ ২ হাজার ৫৯৬ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১টি চেকের মাধ্যমে ১ কোটি ১৫ লাখ ৮ হাজার ১৩৯ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯টি চেকের মাধ্যমে ৯৮ লাখ ৫ হাজার ৯১২ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের আংশিক সময়ে ৪২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫৬ টাকা ও জিপিএফ অগ্রিম উত্তোলনের নামে ৯টি চেকের মাধ্যমে ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ৮১১ টাকা উত্তোলন করেছেন নজরুল। যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৯১ হাজার ২১৪ টাকা।

এর আগে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ঘটনা জানাজানির পর দুর্নীতির তথ্য ঢাকতে অফিসের নথিপত্র গায়েব করে দেশত্যাগের চেষ্টাও করেন নজরুল। তবে বিমানবন্দরে তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় তার জালিয়াতির বিষয়টি তদন্তাধীন ছিল। 

ওই সময় পরিচয় গোপন করে সৌদি আরব পালানোর চেষ্টা করেন নজরুল। সৌদি আরব যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৬০৬ ফ্লাইটে সিলেট থেকে ঢাকায় যান নজরুল। পরদিন ২৭ নভেম্বর বিজি-০৩৭ ফ্লাইটে সরকারি কর্মচারী পরিচয় গোপন করে ব্যবসায়ী পরিচয়ে বিদেশি মুদ্রাসহ সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তবে তার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করেন বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের সদস্যরা। পরিচয় গোপন করা ও পাসপোর্টে এনডোর্সমেন্ট ছাড়াই বিদেশি মুদ্রাপাচারের চেষ্টা করার অপরাধে নজরুলের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৭ নভেম্বর বিমানবন্দর থানায় মামলা করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ।

ওই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নজরুল ইসলামের কাছ থেকে ১ হাজার সৌদি রিয়াল, ৫৫০ দিরহাম ও ৭৯০০ ইউএস ডলার জব্দ করা হয়েছে। অথচ তার পাসপোর্টে এনডোর্সমেন্ট করা ছিল এক হাজার ডলার। সরকারি কর্মচারী হলেও তিনি নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন।

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গত ২৭ জানুয়ারি সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানায় মামলা করেন দুদকের সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। 

তিনি বলেন, নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনি অন্য একটি মামলায় জামিনে থাকলেও আমাদের করা মামলার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। তাকে ধরতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই নজরুল গ্রেপ্তার হবে। 

আরএআর