১৮ মাস ধরে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড। হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় মেডিকেল অফিসার দিয়েই চালানো হচ্ছে শিশুদের বর্তমান চিকিৎসা কার্যক্রম। এ কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ক্ষুব্ধ হাসপাতালে সেবা নিতে আসা শিশুর অভিভাবক ও স্বজনরা।

তবে সিভিল সার্জন বলছেন, ঘটনাটি দুঃখজনক হলেও সত্য। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হবে বলে জানিয়েছে।

দুদিন আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু লাবিবাকে (৪ মাস) হাসপাতালে ভর্তি করেছেন বাবা সোহেল হোসেন। সাতক্ষীরা শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার বাসিন্দা তিনি। জানান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের পরিবেশটা ভালো। মেয়ের চিকিৎসা যা পাচ্ছি, তাতে আমি খুশি। তবে এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই, মেডিকেল চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন বলে জেনেছি।

ছয় দিন আগে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন সাতক্ষীরা সদরের ধূলিহর ইউনিয়নের মেসেরডাঙ্গা গ্রামের হারুন অর রশিদের গর্ভবতী স্ত্রী মিতু আক্তার। দুদিন আগে একটি সন্তান প্রসব করেছেন এই নারী। বর্তমানে গাইনি ওয়ার্ড থেকে সদ্যোজাত শিশুকে শিশু ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে।

হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই জানার পর শিশুটির মা মিতু আক্তার জানান, ভর্তি হওয়ার পর থেকে চিকিৎসার কোনো ত্রুটি আমি পাইনি। তবে এখানে শিশু বিশেষজ্ঞ নেই তবে চিকিৎসা দিচ্ছেন কে? জেনে এখন তো চিন্তায় পড়ে গেলাম। হাসপাতালে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ থাকলে ভালো হয়।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২৪ জানুয়ারি (সোমবার) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ২৪ শিশু। এরা অধিকাংশই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। ২০২১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর থেকে রোগী ভর্তি কমেছে। গত দুই মাসে ৬০০ থেকে ৭০০ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। তার আগের মাসগুলোয় ওয়ার্ডে একশর বেশি শিশু রোগী ভর্তি থাকত। প্রতি মাসে চিকিৎসা নিয়েছে দেড় থেকে দুই হাজার শিশু। বর্তমানে শিশু রোগীর ভর্তি সংখ্যা কমে গেছে। 

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাছিমা খাতুন জানান, হাসপাতালটিতে একজন শিশু কনসালট্যান্ট খুব প্রয়োজন। এখন মেডিকেল অফিসার রওশন দায়েমী শিশুদের দেখাশোনা করছেন। জরুরি মুহূর্তে জরুরি বিভাগ থেকে পরামর্শ আবার কখনো কখনো মোবাইল ফোনে পরামর্শ নিয়ে শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এর আগে যখন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অসীম কুমার স্যার ছিলেন, তখন অনেক রোগী ছিল। তিনি বদলি হওয়ার পর থেকে শিশু রোগীদের দেখার একটু সমস্যা হচ্ছে।

তিনি জানান, অনেক অভিভাবক এসে জিজ্ঞেস করেন, এখানে শিশু বিশেষজ্ঞ কে? যখন জানতে পারেন হাসপাতালে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই, তখন শিশুকে ভর্তি না করে অন্যত্র চলে যান।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ডা. অসীম কুমার ছিলেন খুব সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের খুব জনপ্রিয় একজন চিকিৎসক। তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার পর শিশু বিভাগটির কার্যক্রম একটু ঝিমিয়ে গেলেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মেডিকেল অফিসার রওশন দায়েমী নিয়মিত ইনডোর-আউটডোরে শিশু রোগী দেখছেন।

সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া সরকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাবেক ছাত্রনেতা আকরাম হোসেন বাপ্পি। তিনি অভিযোগ করে জানান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের দৈন্যদশা। এটা দেখার কোনো লোক নেই। রাজনৈতিক নেতারা, এমপিরা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালটি নিয়ে চিন্তা করেন না। জনগুরুত্বপূর্ণ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। দূর-দূরান্ত থেকে জরুরি মুহূর্তে সেবা নিতে এলে চিকিৎসক নেই।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখানে যে ডাক্তাররা আছেন, তারা তাদের ক্লিনিক ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তারা শিশু ওয়ার্ড নিয়ে চিন্তা করেন না। তারা চিন্তা করেন কীভাবে ক্লিনিকে রোগী নেওয়া যায়। সদর হাসপাতালে যে হাজার হাজার গরিব রোগী আসে, শিশু আসে এদের ডাক্তাররা দেখেন না, এদের ব্যবসা ক্লিনিক নিয়ে। আমি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সদর হাসপাতালে একজন শিশু কনসালট্যান্ট নিয়োগ করার দাবি জানাচ্ছি।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত জানান, সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল। এখানে শিশু চিকিৎসার জন্য ১৪টি শয্যা রয়েছে। এই ১৪ শয্যার বিপরীতে একসময়ে ১২০ জন শিশুকে চিকিৎসা আমরা দিয়েছি। কেউ কোনো অভিযোগ তুলতে পারেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আমরা এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ পাচ্ছি না।

মেডিকেল অফিসার দিয়ে শিশু বিভাগের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করছি, শিশু বিভাগের একজন কনসালট্যান্ট প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, সামনে অনেকে প্রমোশন পাবেন। সেখান থেকে একজন কনসালট্যান্ট দেওয়া হবে।

আকরামুল ইসলাম/এনএ