রংপুর বিভাগজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এটি করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এই সময়ে বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। এক দিন আগে শনাক্ত হয়েছে ২৮৫ জন করোনা রোগী।

নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হারও। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার গিয়ে ঠেকেছে ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশে। এর আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। 

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম।

গত ২৪ ঘণ্টাসহ এর আগের ১১ দিনে বিভাগ জুড়ে (১৫ -২৫ জানুয়ারি) ১ হাজার ৩৭৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এ সময়ে আক্রান্ত একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। 

বিভাগীয় পরিচালক জাকিরুল ইসলাম জানান, ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের আট জেলার ৮০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে  দিনাজপুরের ৮৮, রংপুরের ৯০, নীলফামারীর ৫৯, ঠাকুরগাঁওয়ের ৪৮, গাইবান্ধার ২৬, লালমনিরহাটের ২১, পঞ্চগড়ের ১৬, এবং কুড়িগ্রাম জেলার ১১ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন।

বর্তমানে বিভাগে করোনা আক্রান্ত ৪৬ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সংকটাপন্ন ১৬ রোগীকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে। বাকিদের বাসায় রেখে চিকিৎসা চলছে।

পরিচালক আরও জানান, রংপুর বিভাগে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে দিনাজপুরে। এ জেলায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ১৫ হাজার ৪৮৭ এবং ৩৩৩ জন মারা গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বিভাগীয় জেলা রংপুরে। এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭ তে।

এ ছাড়া জেলা হিসেবে সবচেয়ে কম ৬৩ জন মারা গেছে গাইবান্ধায়। এ জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৯৯৯ জনের। ঠাকুরগাঁওয়ে মৃত্যু ২৫৬ ও শনাক্ত ৭ হাজার ৯০৬, নীলফামারীতে মৃত্যু ৮৯ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৬৫৯, পঞ্চগড়ে মৃত্যু ৮১ ও শনাক্ত ৩ হাজার ৯২৮, কুড়িগ্রামে মৃত্যু ৬৯ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৭০০ এবং লালমনিরহাট জেলায় মৃত্যু ৬৯ ও আক্রান্ত ২ হাজার ৮৪৮ জন।

তিনি জানান, ২০২০ সালের মার্চে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগে মোট ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ৫৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আট জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৫৩ জনের। এখন পর্যন্ত বিভাগে সুস্থ হয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৬১ জন।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট জেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন বলা হয়েছে। এ ছাড়া ইয়েলো জোন বা মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও ঠাকুরগাঁও জেলা। দিন দিন করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে ভারতের কোলঘেঁষা এই বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদফতর।

রংপুরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় গঠিত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, সচেতনতার অভাব থেকেই মানুষজন এখনো পুরোপুরি টিকাগ্রহণ করেনি। বেশির ভাগ এখনো মুখে মাস্ক ব্যবহার করছে না। এই পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত। এ জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়া জরুরি। নয়তো সাধারণ মানুষদের দায়িত্বহীন কাণ্ডে বড় বিপর্যয় ঘটবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, গণটিকাসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে টিকার আওতায় আনার ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আগের চেয়ে কমে আসছে। তবে বর্তমানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এবং করোনার ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই