রোয়াইলবাড়ি দুর্গ

ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ। মোগল আমলের স্থাপত্য এটি। নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের রোয়াইলবাড়ি এলাকায় দুর্গটির অবস্থান। দুর্গটি বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। সরকারিভাবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে ঐতিহাসিক এসব নির্দশন সংরক্ষণের জন্য মাঝে মধ্যে খননকাজ শুরু হলেও মাঝপথে আবার থেমে যায়।

ফলে অযত্ন, অবহেলায় ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটি আজ হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, এই এলাকাটি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা হয়ে উঠছে না। এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে।

কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত তৎকালীন মোগল আমলের প্রশাসনিক কেন্দ্র ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ। কালের আর্বতে এই দুর্গটি হারিয়ে যায় মাটির নিচে। প্রায় দুই যুগ আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খননকাজ পরিচালনা করে দুর্গটির সন্ধান পায়।

সে সময় মাটির ঢিবি খনন করে মোগল আমলের কারুকার্য-সংবলিত ইট দিয়ে গড়া একটি বারোদুয়ারি মসজিদ, এর আশপাশে প্রাসাদের চিহ্ন ও একটি সুড়ঙ্গ পথের সন্ধান পায়। সুড়ঙ্গের পাশেই একটি বটগাছের নিচে কথিত নিয়ামতবিবির মাজার এবং ১২ হাত লম্বা ডেংগু মালের কবরস্থান। কিন্তু অজানা কারণে কিছু দিনের মধ্যেই খননকাজ বন্ধ করে দেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

এরপর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৯৮৭ সালে সরকারিভাবে ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় ৪৬ একর ভূমি পুরার্কীতি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। সে সময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শুধু একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়ে এলাকাটিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। তবে নির্মাণ করা হয়নি কোনো বাউন্ডারি দেয়াল কিংবা নেই কোনো কাঁটাতারের বেড়া।

খননের পর থেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে পাথরের ও কাঁচের বিভিন্ন পিলার। এদিকে সম্প্রতি নেত্রকোনার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নতুন করে খননকাজ শুরু করে আরও বেশ কিছু ঐতিহাসিক নির্দশন বারোদুয়ারি মসজিদের দক্ষিণ দিকে খুঁজে পায়। খুঁজে পায় দুর্গের ফটকের সন্ধান। খনন করে সংরক্ষিত বিভিন্ন কারুকার্য-সংবলিত ইট পাথরের অস্থায়ী প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয় সেখানে।

এই প্রদর্শনী ও খননকাজ দেখতে পরিদর্শনে যান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আলতাব হোসেন। তিনি পরিদর্শনকালে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও খননকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১ বছরেরও তার কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে ঐতিাহসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ এলাকা দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এখানে আসছেন। কিন্তু সম্ভাবনাময় এই পর্যটন এলাকাটিতে জেলা পরিষদের উদ্যোগে পাকা করে দুটি ছাতাকৃতির বিশ্রামাগার নির্মাণ করলেও এর আধুনিকায়নে আর কিছুই করা হয়নি। ফলে পর্যটকদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা থেকে রোয়াইলবাড়ি দুর্গ পরিদর্শনে আসা নূর সালাম নামে এক তরুণ জানান, এলাকাটি খুবই সুন্দর। দুর্গের স্থাপনাগুলোও দৃষ্টিনন্দন। জায়গাটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে। কিন্তু এখানে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো রেস্টুরেন্ট বা বিশ্রামাগারও। দুর্গটির উন্নয়নকাজ ও পর্যটকদের জন্য সুযোগসুবিধা বাড়ানো হলে এখানে দর্শনার্থীদের যাতায়াত আরও বৃদ্ধি পাবে।

কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনউদ্দিন খন্দকার বলেন, দুর্গটির সৌন্দর্য ও পর্যটকদের সুবিধা বৃদ্ধিসহ দুর্গ এলাকার উন্নয়নে একটি পরিকল্পনা ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এটি জেলার অন্যতম পর্যটক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে।

জেলা প্রশাসক কাজি আব্দুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, যদি অধিদপ্তর-মন্ত্রণালয় থেকে খননকাজে আবার প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে রোয়াইলবাড়ি দুর্গসহ অন্য দর্শনীয় স্থানগুলোকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে কাজ করবে জেলা প্রশাসন। এরইমধ্যে এ বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।

এমএসআর