‘শ্বাসকষ্টের কারণে ১২-১৩ বছর ধরে ঘরে বইডা (বসা) আছি। টাকার অভাবে ওষুধ খাইতে পারি না। আমার চার ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। তারা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। আমাদের কোনো খোঁজ নেয় না। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় দুবেলা দুমুঠো খাবার জোটে। ঘরডা ভাঙি রইছে, আল্লাহ আর আমনেগো দয়া চাই। আমি আপনাদের কাছে একটা ঘর চাই।’ 

কথাগুলো বলছিলেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ কালু মিয়াজি। ঢাকা পোস্টের কাছে দুঃখের কথা বলতে গিয়ে তার দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রী হারুনের নেছা তার বড় সঙ্গী। স্ত্রী ছাড়াও তার আরও বড় সঙ্গী ইনহেলার।

কালু মিয়াজি উপজেলার চরমোহনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ রায়পুর গ্রামের ঢালী বাড়ির বাসিন্দা। এক সময় তিনি মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। বয়সের ভারে অসুখ বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে কর্মক্ষেত্রে হয়ে পড়েন অক্ষম। ছয় ছেলেমেয়ে থাকলেও এখন তার পাশে নেই কেউই।

কালু মিয়াজির ডান হাতে টিউমারের মতো ফুলে আছে। এটি অপারেশন করতে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। কিন্তু টাকার অভাবে অপারেশনও করতে পারছেন না। তার কোমরের নিচের অংশের মাঝ বরাবর হাড়েও সমস্যা রয়েছে। এতে তার স্বাভাবিকভাবে বসতে কষ্ট হয়।

কালু মিয়াজি বলেন, আশপাশের মানুষ যদি ৫০-১০০ টাকা দেয় তাহলে দুই-তিন কেজি চাল কিনে এনে খায়। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হয়েছে। তবে প্রতিবেশীরা আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে।

শীত-বৃষ্টি কীভাবে পার করেন জানতে চাইলে কালু মিয়াজি বলেন, বৃষ্টির সময় পানি পড়ায় চকি থেকে নেমে দরজার পাশে বসে থাকি। দরজার সঙ্গে কাত হয়ে বসতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছি। বৃষ্টি হলেই জরাজীর্ণ চালা দিয়ে পানি পড়ে চকি ভিজে যায়। আবার সেই ভেজা চকিতেই ঘুমাতে হয়। ভাঙা ঘরের চারপাশ দিয়ে কুয়াশা ঢোকে। নেই শীত নিবারণের কাপড়। প্রচণ্ড ঠান্ডায় ঘরে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

কালু মিয়াজি বলেন, সরকারি কোনো সহযোগিতা কপালে জোটেনি। আল্লাহর দয়া আর পাড়াপ্রতিবেশীর কল্যাণে স্ত্রীকে নিয়ে আমি বেঁচে আছি। আমি ৭ বার ও আমার স্ত্রী একবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। তখন একটি নাপা ট্যাবলেট কিনে দেওয়ার জন্য কোনো ছেলেমেয়ে আমাদের পাশে ছিল না। তবে পাড়াপ্রতিবেশীরা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে।

কালু মিয়াজির স্ত্রী হারুনের নেছা বলেন, ছেলেরা শ্বশুরবাড়িতে থাকে। আমাদের খোঁজ নেয় না। মেয়ে-জামাইদের ভালো আপ্যায়ন করতে পারি না। এজন্য তারাও আমাদের দেখতে আসে না।

হারুন, আবুল খায়ের, আবদুল মান্নান পলাশ নামে কয়েকজন প্রতিবেশী জানায়, কালু মিয়াজির সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী বিষয়টি আশপাশের সবাই জানে। কষ্টের মধ্যে থাকলেও তিনি কখনো কারও কাছে হাত পাতেননি। নিয়মিত নামাজ পড়েন। সবার সঙ্গেই খুব ভালো সম্পর্ক তার। তার ভাঙা ঘরটি দেখে খুবই কষ্ট হচ্ছে। সমাজের বিত্তবান ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি কালু মিয়াজিকে যেন একটি ঘর উপহার দেওয়া হয়।

চরমোহনা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য আনোয়ার হোসেন সুমন বলেন, আমি দায়িত্ব পেয়েছি মাত্র এক মাস হয়েছে। শীত নিবারণের জন্য আমি কম্বল দিয়ে এসেছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করা হবে।

এসপি