চেতনানাশক ওষধ খাইয়ে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পর টানা পাঁচ দিন পর জ্ঞান ফিরেছে সাফিয়া-মারিয়ার বাবা আনিসুর রহমানের। তবে হারিয়েছেন শিক্ষক-ছাত্রদের উপহার হিসেবে দেওয়া নিজের সম্বল ইজিবাইকটি। এখন শুধু হাসপাতালের বিছানাই কাঁদছেন তিনি। এদিকে অভাবের সংসারে যমজ শিশু সাফিয়া-মারিয়ার দুধও ফুরিয়ে গেছে। কীভাবে চলবে সংসার, বাচ্ছাদের খাবার―সেই ভাবনায় রাজ্যের হতাশা এখন চোখেমুখে।

আনিসুর রহমান সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারটির একটি কুঁড়েঘর ছাড়া কিছুই নেই। অভাবের তাড়নায় যমজ শিশু সাফিয়া-মারিয়াকে দুধের বদলে ময়দা গোলা পানি খাওয়াতেন তার মা-বাবা। এভাবেই খেতে খেতে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়ে তারা। গত ৩০ জুলাই মরণাপন্ন অবস্থায় তাদের ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। ঘটনাটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আলোচনায় আসে অসহায় পরিবারটি।

ওই দিন সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরা জেলগেট এলাকা থেকে চারজন পাটকেলঘাটা যাবেন বলে জানান। পরে চা খেতে দেন। কিছুক্ষণ পর অচেতন হয়ে পড়ি। এরপর কী ঘটেছে, আমি কিছুই জানি না। কীভাবে কী করব, বাচ্ছাদের কী খাওয়াব! স্যারেরা ইজিবাইকটা দিয়েছিলেন। আমি আবার নিঃস্ব হয়ে গেলাম

সংবাদ প্রকাশের পর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী পরিবারটির পাশে দাঁড়ান। স্থায়ীভাবে পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করতে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্ররা মিলে গত ১৮ অক্টোবর যজম শিশু দুটির বাবা আনিসুর রহমানকে একটি নতুন ইজিবাইক উপহার দেন। সেটির উপার্জনের টাকা দিয়ে ভালোই চলছি সংসার।

কিন্তু টানাটানির সংসারে আবারও দুর্দিন নামে ১২ ডিসেম্বর। ছিনতাইকারীরা চেতনানাশক ওষধ খাইয়ে আনিসুর রহমানের সেই ইজিবাইকটি ছিনতাই করেছে। ওই দিন বিকেলে আনিসুরকে অচেতন করে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া-নওয়াপাড়া বাইপাস সড়কের কলিয়া আমবাগান এলাকায় ফেলে রেখে যায়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে প্রথমে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘটনার পাঁচ দিন পর আজ (বৃহস্পতিবার) জ্ঞান ফিরেছে আনিসুর রহমানের। হাসপাতালের বিছানাই এখন শুধু কাঁদছেন তিনি।

বাচ্ছা দুটোকে দুধ কিনে খাওয়াতে পারতাম না। তারপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সংবাদ হলে স্যারেরা পাশে দাঁড়ান। ইজিবাইক কিনে দেন। সেটি থেকে উপার্জনের টাকায় সংসার চলছিল। সেই ইজিবাইকটি ছিনতাই হওয়ার পর আজ ছয়দিন দুধও খেতে পারছে না বাচ্ছারা। স্বামীকে চিকিৎসা করাব, সেই টাকাও নেই। একদম পথে নেমে গেছি

স্বপ্না বেগম, আনিসুর রহমানের স্ত্রী

আনিসুর রহমান জানান, ওই দিন সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরা জেলগেট এলাকা থেকে চারজন পাটকেলঘাটা যাবেন বলে জানান। পরে চা খেতে দেন। কিছুক্ষণ পর অচেতন হয়ে পড়ি। এরপর কী ঘটেছে, আমি কিছুই জানি না। কীভাবে কী করব, বাচ্ছাদের কী খাওয়াব! স্যারেরা ইজিবাইকটা দিয়েছিলেন। আমি আবার নিঃস্ব হয়ে গেলাম।

আনিসুর রহমানের স্ত্রী স্বপ্না বেগম বলেন, বাচ্ছা দুটোকে দুধ কিনে খাওয়াতে পারতাম না। তারপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সংবাদ হলে স্যারেরা পাশে দাঁড়ান। ইজিবাইক কিনে দেন। সেটি থেকে উপার্জনের টাকায় সংসার চলছিল। সেই ইজিবাইকটি ছিনতাই হওয়ার পর আজ ছয়দিন দুধও খেতে পারছে না বাচ্ছারা। স্বামীকে চিকিৎসা করাব, সেই টাকাও নেই। একদম পথে নেমে গেছি।

সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই আহম্মদ আলী জানান, ওই দিন একইভাবে সাতক্ষীরা থেকে তিনটি ইজিবাইক ছিনতাই হয়েছে। অচেতন অবস্থায় ইজিবাইকের তিন চালকের একজনকে তালা থানায় ও দুইজনকে পাটকেলঘাটা থানার পৃথক দুটি স্থানে পাওয়া যায়। ঘটনার পরদিন রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি ইজিবাইকসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে সেখানকার থানা পুলিশ। সেখানে একটি মামলা হয়। 

এসআই বলেন, পরে ইজিবাইকটি সদরের রইচপুর এলাকার খায়রুল ইসলামের বলে শনাক্ত হয়। সাতক্ষীরা সদর থানায়ও পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে গোপালগঞ্জ থানায় গ্রেফতার দুইজনের বিরুদ্ধে। এ মামলায়ও গ্রেফতার দুইজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

আগামী ২৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা আদালতে শুনানি হবে। তাদের আমাদের হেফাজতে নেওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে ছিনতাই হওয়া আরও দুটি ইজিবাইকের ব্যাপারে তথ্য জানা যাবে। গোপালগঞ্জ জেলা থেকে এসে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে এসব তথ্য জানান এসআই।