রংপুরে ‘ট্রে’ বীজতলা পদ্ধতিতে কৃষকদের ব্যাপক সাড়া
শীতের মৌসুমে বীজতলা নিয়ে কৃষকদের চিন্তায় থাকতে হয়। কখনো ঘন কুয়াশা নয়তো শৈত্যপ্রবাহে নষ্ট হয় বীজতলা। যার প্রভাব পড়ে ফসলি জমিতে। এই পরিস্থিতিতে রংপুর অঞ্চলে ‘ট্রে’ পদ্ধতিতে বীজতলা ও চারা তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় এ পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া ফেলছে।
কম খরচে ট্রে পদ্ধতিতে সুস্থসবল বীজতলা ও চারা তৈরিসহ অধিক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এই পদ্ধতিতে কৃষকেরা চাষাবাদও শুরু করেছেন।
বিজ্ঞাপন
রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলে এবার ট্রের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ৫৭ হাজার।
ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির কারণে ধানের চারাগুলো হবে সরাসরি মাটিতে উৎপাদিত চারার চেয়ে অনেক সুস্থ-সবল। ফলন বেশি হওয়ার সঙ্গে কৃষক লাভবানও হবেন। ট্রে পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। নিয়মিত সার, সেচ, আগাছা পরিষ্কার করে দেওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের পরামর্শও দিচ্ছে তারা।
বিজ্ঞাপন
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, পাঁচ জেলায় ৫৭ হাজার ট্রে বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে রংপুরে ১২ হাজার, গাইবান্ধায় ২ হাজার ৫০, কুড়িগ্রামে ৩০ হাজার, লালমনিরহাটে ৪ হাজার ৫০ এবং নীলফামারী জেলায় ৮ হাজার ৮৫০টি ট্রেতে বীজতলা তৈরিকাজ চলছে। কৃষকদের শ্রমিকের অপেক্ষায় না থেকে যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রের মাধ্যেমে চারা রোপণ ও কর্তন করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য।
বোরোর বীজতলা ট্রে পদ্ধতিতে করলে কুয়াশা বা শৈত্যপ্রবাহে নষ্ট হবে না। ট্রে পদ্ধতির চারাগুলো সুস্থ ও সবল হবে। চাষাবাদে ফলন বেশি পাওয়া যাবে। ট্রেতে বীজতলা তৈরির কারণে বীজের কোনো ক্ষতি হবে না বা কোনো বীজ নষ্ট হবে না। কৃষকের শ্রমিক-সংকট নিরসন হবে। সঙ্গে খরচও কমবে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
ইতোমধ্যে এই অঞ্চলে ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা ও চারা উৎপাদনে কৃষকদের মধ্যে সাড়া মিলেছে। ভবিষ্যতে অনেক কৃষকই নিজ উদ্যোগে ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতে পারবেন বলে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এতে ধানগাছের চারা রোপণ, নিড়ানি ও ধানগাছ কর্তনসহ মাড়াইয়ের কাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে। ট্রে নির্ভর চাষাবাদ শুরু হলে শ্রমিক-সংকট নিরসনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে, সঙ্গে কৃষক লাভবান হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দাবি, ট্রে পদ্ধতি বীজতলা ও চারা তৈরির পর কৃষকরা উন্নত যন্ত্রপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। এতে ধান চাষে শ্রমিক-সংকট নিরসন ও ব্যয় কম হবে। সনাতন পদ্ধতিতে চারা তৈরি করতে ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু ট্রে পদ্ধতিতে চারা তৈরি হয় ২৫ থেকে ৩০ দিনে। ট্রের মধ্যে চারা থাকে বলে পরিচর্যাও বেশি হয়। ফলে প্রতিটি চারা রোগমুক্ত সুস্থ সবল হয়ে ওঠে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, রংপুর জেলার ১ হাজার ২০০ ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ট্রে পদ্ধতি অনুসরণ করলে বোরোর চারা বেশি সবল হবে। আর সবল চারা দ্রুত বেড়ে ওঠে, ফলনও ভালো দেয়। বেশি ফলন হলে কৃষকের লাভও বেশি হবে। যাতে কৃষক খরচ কমিয়ে বেশি লাভবান হতে পারে, সেটাকে গুরুত্ব দিয়েই কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
এনএ