ভ্যানচালককে হত্যার পর জানাজায় অংশ নেয় তারা
মনির ও মেহেদী সম্পর্কে বন্ধু। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি তারা প্রতিবেশী বুলবুলকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাটারিচালিত এক ভ্যানচালককে হত্যা করেছে। ঘটনার পর অটোভ্যানটি অন্যত্র বিক্রি করে তারা টাকাও ভাগাভাগি করে নিয়েছে। পরে নিজ বাসায় ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকে। ঘটনার দুদিন পর তিনজন মিলে আবার ওই ভ্যানচালকের জানাজায়ও অংশ নেয়।
গত ২০ জানুয়ারি রাতে রংপুরের মিঠাপুকুরে নির্জন একটি আম বাগানে সংঘটিত ক্লুলেস এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনসহ জড়িত মনির ও মেহেদীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্যত্র বিক্রি করা চার্জারভ্যান উদ্ধারসহ মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলারটি জব্দ করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর আসামি প্রতিবেশী বুলবুল আহমেদ (২৬) পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (ডি সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। ।
তিনি জানান, চাঞ্চল্যকর ভ্যানচালক মিয়াজান মিয়া (৪০) হত্যাকাণ্ডে জড়িত মনিরুজ্জামান ওরফে মনির (১৭) ও মেহেদি হাসান ওরফে সানিকে (১৬) গতকাল বুধবার গ্রেফতার করা হয়। বয়সে শিশু এই দুই আসামি বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আসামি মনিরুজ্জামান মনির মিঠাপুকুর উপজেলার রামেশ্বরপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে এবং মেহেদি হাসান সানি একই উপজেলার কাশিমপুর সরকারপাড়া গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে। পতালক থাকা বুলবুল আহমেদ কাশিমপুর সরকারপাড়ার মুকুল মিয়ার ছেলে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কামরুজ্জামান বলেন, গত ২১ জানুয়ারি সকাল ৭টার দিকে মিঠাপুকুর উপজেলার চেংমারী ইউনিয়নের পাগলারহাট ও ফকিরেরহাটের মধ্যবর্তী আঞ্চলিক মহাসড়কে রামেশ্বরপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি আম বাগান থেকে ভ্যানচালক মিয়াজান মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত মিয়াজান একই ইউনিয়নের চেংমারি এলাকার মৃত নবীর উদ্দিনের ছেলে। হত্যাকারীরা তার ব্যাটারিচালিত চার্জারভ্যান ও মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায়।
তিনি আরও জানান, মনির ও মেহেদী তারা খুব ভালো বন্ধু এবং একই সঙ্গে চলাফেরা করে। তাদের কাছে কোনো টাকা না থাকায় তারা তাদের সমস্যার কথা প্রতিবেশী বুলবুলকে জানান। পরে বুলবুলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে তারা তিনজন মিলে যাত্রীবেশে মিয়াজানের অটোভ্যানটি ভাড়া করে। পথিমধ্যে নির্জন জায়গায় পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বুলবুল তার মাফলার দিয়ে ভ্যানচালক মিয়াজানের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে।
পরে ভ্যানটি নিয়ে মূল রাস্তা থেকে ৩০০ মিটার দূরের একটি নির্জন আম বাগানে গিয়ে মিয়াজানকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে মোবাইল ফোন ও ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই রাতেই তারা ভ্যানটি নিয়ে গঙ্গাচড়ার গজঘণ্টা এলাকায় চলে যায়। পরদিন তারা ভ্যানটি বিক্রি করে নিজ বাসায় ফিরে আসে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকে। ঘটনার দুদিন পর তারা তিনজন মিলে নিহত মিয়াজানের জানাজায়ও অংশ নেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রোমানা বেগম লালমাই বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় মামলা করেন। পুলিশ গতকাল বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রথমে মনিরকে গ্রেফতার করে তার কাছে থাকা নিহত মিয়াজানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলার উদ্ধার করে। পরে মনিরের দেওয়া তথ্যে জড়িত অপর আসামি মেহেদীকেও গ্রেফতার করা হয়।
পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিকেলে রংপুর নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার লিটন মিয়ার অটোরিকশার গ্যারেজ থেকে ছিনতাই হওয়া অটোভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। ভ্যানচালককে হত্যার পর ওই অটোভ্যানটি প্রথমে গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা এলাকার বাবলু মিয়ার কাছে বিক্রি করে হত্যাকারীরা। পরে বাবলু মিয়া রংপুর নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দোলাপাড়া এলাকার নুরুল আমিন এবং রাসেদ মিয়ার কাছে অটোভ্যানটি বিক্রি করেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর