পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গায় গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সাঁথিয়া উপজেলা প্রাশাসন গৃহহীনদের জন্য ২০টি ঘর নির্মাণের জন্য ক্ষেতুপাড়া মৌজার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিত্যাক্ত ভবন ও গাছ কেটে নির্ধারিত স্থানে ঘর নির্মাণ করেছে। গত বছরের ২৯ নভেম্বরের এক চিঠিতে ভবন ভাঙ্গা ও গাছ কাটার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দেন ক্ষেতুপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা।

এলাকাবাসী ও জমি দানকারীর আত্মীয়রা জানান, এলাকার জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সিএস (ডিএস-১৪০) খতিয়ানের মালিক ওই গ্রামের বাছের প্রামানিক ব্রিটিশ আমলে (১৯২৬ সাল) ওই স্থানে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে হাসপাতালটি সরকারিকরণ হলে এসএ আমলে জেলা বোর্ড বরাবর হাসপাতালের নামে বাছের প্রামানিক নিজস্ব ২ একর তিন শতক জমি রেকর্ড করে দেন।  আরএস জরিপকালে ভুলক্রমে জেলা প্রশাসক পাবনার নামে জমিটি ১নং খতিয়ানে রেকর্ড হয়। এ সুযোগে হাসপাতালের জায়গায় গুচ্ছ গ্রাম নির্মাণ করতে থাকেন সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জামাল আহমেদ।  

পরে হাসপাতালের জায়গায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ না করতে পাবনা জেলা জজকোর্টে একটি মামলা করেন বাছের প্রামানিকের নাতি বাবু প্রামানিক। 

এদিকে এলাকাবাসীর পক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক স্থানে হাসপাতালের জমি রক্ষায় লিখিত অভিযোগ করেন রফিকুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার সকালে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন সিনিয়র সচিব ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান।

এ সময় স্থানীয়রা হাসপাতালের জমি রক্ষায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। স্থানীয়রা বলেন- হাসপাতালের জায়গায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ আমরা চাই না। হাসপাতালই বেশি প্রয়োজন আমাদের। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করে এই উপ-স্বাস্থকেন্দ্র। এরপর যদি বড় ধরনের স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতাল বরাদ্দ দেওয়া হয় তাহলে আমরা জায়গা দিতে পারব না। 

জমি দানকারীর আত্মীয় ইউনুস মুহুরী বলেন, ঘর নির্মাণ কাজে বাধা দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে ভয়ভীতি দেখান। এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জামাল আহমেদসহ মামলার বিবাদীগণকে আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয়। নিষেধাজ্ঞার পরও তারা তা অমান্য করে ঘর নির্মাণ কাজ করছে। এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের জায়গা দখলমুক্ত চাই।

সাঁথিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বৈশাখী বলেন, আমি সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন স্থানে জমি রক্ষায় চিঠি দিয়েছি। যেখানে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে হাসপাতালের পুরাতন ভবন ও গাছ ছিল।

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জামাল আহমেদ বলেন, আদালতের কোনো নোটিশ আমি আগে পাইনি। দুই-এক দিনের মধ্যে ওই নোটিশটি পেয়েছি। এর আগে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। যারা অভিযোগকারী, তারা কেউই এ জমির মালিক না।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে সিনিয়র সচিব ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, খাস জমির মালিক জেলা প্রশাসক। আমরা সরকারের নির্দেশে খাস জমিতে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করি। অভিযোগের বিষয়ে আমি দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে। 

রাকিব হাসনাত/আরএআর