মাঘ মাসের শেষ দিকে বৃষ্টি হওয়ায় আমের লাভ হলেও সর্বনাশ হয়েছে রবি শস্যের। এমনটাই বলছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ, আম বিজ্ঞানীসহ কৃষকরা। আমের মুকুল আসার আগ মুহূর্তে এমন বৃষ্টি একদিকে যেমন মুকুল আসতে সহায়ক হবে, তেমনি খরচ কমবে আমচাষিদের। 

শিবগঞ্জের নয়ালাভাঙ্গার আমচাষি জিয়াউর রহমান বলেন, এই সময়ে আমবাগানে প্রচুর পরিমাণে সেচ দিতে হয়। পর্যাপ্ত সেচ দিলে গাছে মুকুল ফোটে। তাই এই সময়ে বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ। এখন পাতার মাঝে উঁকি দিচ্ছে মুকুল। পানি পাওয়ায় আরও দ্রুত বের হবে মুকুল।

আম ব্যবসায়ী মুকুল আলী জানান, প্রতি বছর সেচ বাবদ কৃষকদের বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়। সেই খরচ কিছুটা হলেও বাঁচবে। বিগত কয়েক বছর আমের ন্যায্যমূল্য পাননি চাষিরা। শুধু খরচ করেই গেছেন। এবার দুই দফায় বৃষ্টি হওয়ায় অধিকাংশ আমচাষির কিছু হলেও খরচ বাঁচবে। ফলে আমে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মসুর ডালের। সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-মহেশপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগে ধান লাগিয়েছি। শুক্রবারের বৃষ্টিতে ধান ডুবে গেছে। অবস্থা এমন যে আবার ধান লাগাতে হবে। মৌসুমের শুরুতেই এমন অবস্থা ভালো না।

ধানচাষি ফারুক হোসেন জানান, হঠাৎ করে এমন বৃষ্টিতে মাঠে থাকা বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে আলু, সরিষা, গম, ধান, মসুরের ক্ষতি হয়েছে। ধান ছাড়া বাকি সব ফসল কয়েকদিনের মধ্যেই ঘরে উঠত। কিন্তু অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। 

সদর উপজেলার দেবিনগরের কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির কারণে অতিরিক্ত পানিতে ফসল নুয়ে পড়েছে। অনেক কৃষক ঋণ করে চাষাবাদ করেছিল। এতে তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেল। সরকার ও কৃষি বিভাগকে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনও আমের মুকুল আসেনি। কয়েক দিনের মধ্যেই মুকুল ফুটতে শুরু করবে। এই বৃষ্টি দারুণ আশীর্বাদ হয়েছে আমের জন্য। বৃষ্টির পর মেনকোজেব গ্রুপের কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেন এই আম বিজ্ঞানী। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টিতে আমের মুকুলের উপকার হবে। তবে রবি শস্যের কিছুটা ক্ষতি হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মসুর ডালের। শুক্রবার দিনব্যাপী চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। 

জাহাঙ্গীর আলম/এসপি