অসময়ে মাঘের বৃষ্টিতে গাইবান্ধায় বিভিন্ন এলাকায় সদ্য রোপণ করা ইরি-বোরো ধানখেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি সরিয়ে না গেলে পানির নিচে ডুবে থাকা এসব খেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে শুরু হওয়া টানা দুই দিনের হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় এসব ফসলি খেত।

সরেজমিনে রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন, রামচন্দ্রপুর ও বল্লমঝাড় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিচু এলাকার বোরো ধানের জমিগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে বোয়ালী ইউনিয়নের পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুরে গ্রামের ২০ একর কৃষিজমি পানির নিচে তলিয়ে আছে বলে জানান কৃষকরা। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এগুলো কৃষিজমি। মনে হবে পুকুর কিংবা বিল।

অথচ পানির নিচে ডুবে থাকা প্রতিটি জমিতে লাগানো আছে বোরো ধান। এসব খেত নষ্ট হলে ওই এলাকার অন্তত ৩৫ জন কৃষক অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের বর্গাচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি আড়াই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে উন্নত জাতের হাইব্রিড ধান লাগিয়েছি। চারা রোপণ করেছি মাত্র ১২ দিন হয়েছে। পুরো জমি তিন দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। এখন ধানও নষ্ট হলো, কীভাবে কী করব জানি না।

একই এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম তারা বলেন, আমার তিন বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে আছে। ডুবে যাওয়ার তিন দিন হলো। আর কয়েক দিন এভাবে পানির নিচে থাকলে ধানের চারা পচে নষ্ট হয়ে যাবে। অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেল।

কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, আমার ৫৮ শতাংশ ধানের জমি পানিতে ডুবে আছে। মাঘ মাসে এ রকম বৃষ্টি আমার জীবনে দেখিনি। হঠাৎ বৃষ্টির কারণেই এসব ফসল তলিয়ে গেছে। এখানে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নাই।

একই অবস্থা জেলার অধিকাংশ নিচু এলাকার। টানা দুদিনের বৃষ্টিতে ধানের জমি ছাড়াও কৃষকের আলুর ক্ষেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে জমি থেকে পানি সরে না গেলে আলুতেও পচন ধরার আশঙ্কা রয়েছে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল এমরান বলেন, হঠাৎ বৃষ্টিতে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কিছু নিচু জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আর বৃষ্টি না হলে কোনো ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে জাতভেদে কোনো ধানখেত সাত থেকে দশ দিন পানির নিচে তলিয়ে থাকলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় যেকোনো উপায়ে খেতের পানিনিষ্কাশন করতে কৃষকদের পরামর্শ দেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বেলাল উদ্দিনকে বলেন, কী পরিমাণ জমির, কোন কোন ফসলের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখনো নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। সব উপজেলাতেই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা নিরূপণে কাজ করছেন। পাশাপাশি কৃষকদের পানিনিষ্কাষনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রিপন আকন্দ/এনএ